দেশব্যাপী করোনা সঙ্কটকালে একটি আলোচিত ও প্রশংসিত নাম, যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদিত করেছেন, তিনি এখন একজন মানবতার নায়ক, করোনাজয়ী বীর, নাসিকের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

বর্তমান বিশ্বে করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করে পৃথিবীকে অশান্ত এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। পশ্চিমা বিশ্বের ইতালি, জার্মানিসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ করোনায় আক্রান্ত। বিশ্বমোড়ল আমেরিকাও ভাইরাসের ভয়াবহ থাবা থেকে রেহাই পায়নি। আক্রান্ত বাংলাদেশও। 

এই মহামারী সংকটকালে কিছু মানুষ পৃথিবীর মানবিক দিকটি বোধহয় সবসময়েই বজায় রাখেন। এমনই এক উজ্জ্বল মানবিক দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। বাংলাদেশের করোনা হটস্পট জোন নারায়ণগঞ্জ সিটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৯ জন।

করোনা এমন এক ভাইরাস যা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। যেখানে কেউ মৃতদেহ সৎকার ও দাফনে এগিয়ে আসেনা, তখন নায়কোচিত বীরদর্পে মানবতার হাত প্রসারিত করে এগিয়ে এসেছেন করোনা বীর খোরশেদ।

কিছুদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বস্তরের মিডিয়ায় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ একটি আলোচিত ও প্রশংসিত নাম। নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা নিবাসী করোনায় মৃত এক হিন্দু নারীর মৃতদেহ সৎকারের একটি ব্যতিক্রমী সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর সর্বাধিক প্রচারণার আলোয় আসেন তিনি।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর খোরশেদ বাংলাদেশ দর্পণকে বলেন, যখন দেখলাম করোনায় আক্রান্ত হলে স্বজনরা লাশের কাছে যেতে চায় না। তখন মানবিক দিক বিবেচনা করে এটা মাথায় এসেছে। আসলে মানুষের বিপদের দিনেই পাশে থাকা জরুরি। এখনই মানুষের সব থেকে বড় বিপদ চলছে। 

খোরশেদ বলেন, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরদিনই মানুষকে সচেতন করতে ২০ হাজার লিফলেট বিতরণ শুরু করি। পরে ১৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় এক নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মারা যাওয়ার পর ওষুধের দোকানে হেক্সিসল কিনতে গিয়ে পাইনি। তারপর গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেই ৬০ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে বিতরণ করি। পরে সিটি করপোরেশনে অনুরোধ জানাই নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন ও মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়ার জন্য। এর প্রেক্ষিতে ৮ এপ্রিল প্রথম উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ দাফন করি। 

আলোচিত এই কাউন্সিলর বলেন, গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৩১ জনের শেষকৃত্যের কাজ করেছি। যার মধ্যে হিন্দু ৫ জনকে দাহ ও মুসলিম ২৬ জনকে দাফন করা হয়। এ কাজে আমার সহযোগিতায় ছিলেন ১২ জন স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়াও সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় কর্মহীন ও অসহায় পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছি।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১২ হাজারের মতো হিন্দু ভোটার রয়েছেন। তারা সবাই আমাকে ভালোবেসে নির্বাচিত করেছেন। তাদের প্রতি মহান দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা থেকেই কাজ করছি। আমরা হিন্দু মুসলমান শান্তি ও ধর্মীয় সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। পারস্পরিক ভালোবাসাই এখানে বেশি। আপনারা আমাদের এখানে বেড়াতে এসে দেখে যাবেন কী সুন্দরভাবে আমরা হিন্দু মুসলমান বসবাস করি।

সত্যিই এই মানবিক করোনাবীরের প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে করোনাকালীন সংকটময় দিনগুলোর ইতিহাসে একটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার বিখ্যাত দুটি লাইন আজ বড় দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ তার অভূতপূর্ব মানবিক কাজের মাধ্যমে সবার চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন-

হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারি! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।

জয়ন্ত কর্মকার, নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ