ঢাকা: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সকল সম্প্রদায়ের, ধর্ম-বর্ণের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাস করলেও মাঝেমধ্যেই ঘটে অবাঞ্ছিত ব্যতিক্রম ঘটনা। যা চিরায়ত বাংলার সম্প্রীতির বন্ধনে আঘাত করে। করোনা মহামারির কারণে সারাদেশে সাধারণ ছুটি বা অঘোষিত লকডাউন চলছে। কিন্তু এরকম মহামারির সময়েও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে থেমে নেই সংখ্যালঘু নির্যাতন বা তাদের মানবাধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।
২০২০ সালের এপ্রিল মাস জুড়ে সাধারণ ছুটির মধ্যেই দেশে একের পর এক বেশকিছু সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে একটি মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস অবজারভেটরি ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস। প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হতে প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হল।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন: এপ্রিল ২০২০
০৪ এপ্রিল
পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার পুরান মহিপুর ইউনিয়নে নারায়ণ সরকারের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে ঘর তুলেছে ভূমিদস্যু রায়হান মীর, ফারুক গং।
০৬ এপ্রিল
যশোরের চৌগাছা থানার তিনটি গ্রামের পঞ্চাশটি হিন্দু পরিবারের ১০০ বিঘা জমি সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জবরদখল করেছে ভুমিদস্যুর গডফাদার ইছাহাক আলী ও তার দুই পুত্র আকমল হোসেন ও আশরাফ আলী।
০৭ এপ্রিল
পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা।
০৮ এপ্রিল
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে মহানবী (সাঃ)-কে নিয়ে ‘কটূক্তিমূলক’ পোস্ট করার অভিযোগে ইন্দ্রজিত হাজারী (৩৫) নামের এক স্কুল শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
০৯ এপ্রিল
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কুকি কালীদাস গ্রামের শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দ ও শিব মন্দিরের লক্ষ্মী প্রতিমা ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা।
১০ এপ্রিল
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে জিউধরা ইউনিয়নের ১০৪নং ডেউয়াতলা মৌজায় এসএ ৭১৭ খতিয়ানে ২৬০২ দাগের জীবন মৃধার পৈতৃক সম্পত্তি ৮ বিঘা জমির ওপরে ঘের ও বসতবাড়ি উচ্ছেদের পায়তারা করে জাহিদুল হাওলাদার গংরা।
১১ এপ্রিল
রোজ শনিবার ফরিদপুর আলমডাঙ্গা উপজেলার টিটুকান্দি গ্রাম নিবাসী অসিত কুমার সরকার স্থানীয় সন্ত্রাসী মোঃ শাহিন শেখকে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা না দেয়ায় প্রায় ৩০জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গ্রামের ৩০টি বাড়িতে হামলা ভাংচুর করে।
১২ এপ্রিল
সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সুধাংশু দাশের বাড়ি দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুই লক্ষ টাকা মূল্যের গাছ কেটে নিয়ে যায় মো. মারফত আলী মুন্সি ও তার ছেলে।
১৩ এপ্রিল
পটুয়াখালী গলাচিপায় প্রভাবশালীর ইন্ধনে সদর রোডে অসহায় বিধবা বাসনা রানী দাশ ও তার ছেলে মেয়েকে পিটিয়ে জখম করে তাদের ভিটেমাটি দখল করা হয়।
১৫ এপ্রিল
নীলফামারী ডিমলা উপজেলায় পূজা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধনেশ্বর রায়ের মেয়ে প্রতিমা রানীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। তার নাম রাখা হয়েছে খাদিজাতুল তৌহিরা।
১৬ এপ্রিল
বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া থানার পশ্চিম সুজনকাঠি (মল্লিকপুর) গ্রামে একটি হিন্দু পরিবারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় হারুন মল্লিক ও তার দুই সন্ত্রাসী ছেলে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
১৭ এপ্রিল
রাজশাহী জেলার নিমাই সরকারের মেয়ে অষ্টমী সরকার (১৪) গোলাম মোস্তফা ও তার সহযোগীদের নিয়মিত উত্ত্যক্তের যন্ত্রণায় নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করে।
১৮ এপ্রিল
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফেসবুকে বাজে মন্তব্য করার কথিত অভিযোগে পরিতোষ কুমার সরকার নামের অনার্স পড়ুয়া হিন্দু যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
১৯ এপ্রিল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় জমায়েত নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদী স্টাটাস দেয়ায় বাগেরহাটের ফকিরহাটের মধু কুন্ডু (৩২) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
২১ এপ্রিল
হিন্দুদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে সাতকানিয়ায় ৩০টি হিন্দু পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী মো. এটিএম, জিয়া উদ্দিন, হাবিবুল্লাহ ও মুসা উদ্দিনের নেতৃত্বে ৮০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল। এতে নারী-পুরুষসহ ২৫ জন গুরুতর জখম হয়।।
২২ এপ্রিল
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর এলাকার পারঘাটী মন্দিরে জুয়া খেলতে বাধা দেওয়ায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর ও মারধর করেছে বখাটেরা।
২৩ এপ্রিল
খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তয় সুব্রত মন্ডল (৩০)কে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
২৪ এপ্রিল
বসতভিটে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে বাগেরহাটেরে মোংলায় এক হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা চালায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এতে গর্ভবতী মহিলাসহ পরিবারের ৭ জন জখম হয়। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
২৫ এপ্রিল
বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলায় গনকপাড়া গ্রামের জমিদখল সংক্রান্ত বিরোধে রবিদাসের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন একই ইউপির সদস্য মো. তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সন্ত্রাস দল।
২৬ এপ্রিল
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরে দুইটি মন্দিরের হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।
২৭ এপ্রিল
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মো. বাবুল ও তার দুই সন্ত্রাসী ছেলের নেতৃত্বে দৌলতপুর গ্রামের নরেন্দ্র মোক্তার বাড়ির দীঘি দখলে নেওয়ার জন্য দুই জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়।
২৮ এপ্রিল
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ২নং ইশানিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত মহেশাইল বাজারে অবস্থিত দুর্গা মন্দির ও তার পার্শ্ববর্তী বনকালী মন্দিরে হামলা এবং ২টি মন্দিরের শিব ও কালী প্রতিমা রাতের আঁধারে ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
২৯ এপ্রিল
সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার বিকাশ চন্দ্র ঘোষের ৫ বিঘা সম্পদ দখল করার মানসে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার বাড়িতে ৩৫ থেকে ৪০ জনের হামলা। ঐ সময় সোলেমান গাজীর হাতে থাকা লাইসেন্সধারী বন্ধুক দিয়ে বিকাশ ঘোষকে মারতে উদ্ধত হলে বিকাশ ঘোষ ও বাড়ির অন্যরা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায়।