ঢাকা: রাজধানীর স্বামীবাগে ইসকন মন্দিরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩৬ জন সেবায়েতের সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। 

পুরান ঢাকার ইসকন মন্দিরের ৩৬ জন সেবায়েত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সংক্রমণ ধরা পড়ার পর মন্দিরে ভেতরেই আইসোলেশনে ছিলেন সেবায়েতরা। তাদের কাউকে হাসপাতালেও যেতে হয়নি।

সম্প্রতি পরপর দুটি পরীক্ষায় সবারই কোভিড-১৯ রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এসেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ইসকন মন্দিরের সেবায়েত দ্বিজমণি গৌরাঙ্গ দাস।

তিনি বলেন, “আমরা সবাই মন্দিরের ভেতরেই আইসোলেশনে ছিলাম। পরপর দুটি পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসায় আমরা ৩৬ জনই করোনাভাইরাসের সংক্রমণমুক্ত হয়েছি বলে জানানো হয়েছে।”

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বাংলাদেশ অফিস ঢাকার স্বামীবাগে।

গত ২৬ এপ্রিল ওই মন্দিরের ৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর আসে।

কীভাবে সুস্থ হলেন তারা?

ইসকন মন্দিরের সেবায়েত গৌরাঙ্গ জানিয়েছেন, সুস্থ হওয়ার জন্য তারা হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়েছেন; যদিও সেবায়েতরা এই সময়ে অ্যালোপ্যাথি ওষুধও নিয়েছেন প্রয়োজন অনুযায়ী।

“আমরা সবসময় হোমিওপ্যাথিই সেবন করি। সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সবাই হোমিও ওষুধ খেয়েছি। পাশাপাশি কেউ কেউ জ্বরের জন্য নাপা এবং কাশির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকও খেয়েছেন। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগ আছে, তারা সেসবের জন্য অ্যালোপ্যাথিও খেয়েছেন।”

অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই কোভিড-১৯ রোগ থেকে সেরে ওঠার নজির রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বাসায় থেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এজন্য শুরু থেকেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে আসছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আয়ুর্বেদের ব্যবহার

সকনের সেবায়েতরা খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনাচরণে এমনিতে কঠোর অনুশাসনের মধ্য দিয়ে চলেন। তারা সবসময় আমিষ জাতীয় খাবার এড়িয়ে নিরামিষ গ্রহণ করেন।

গৌরাঙ্গ দাস জানান, আক্রান্ত থাকারকালে গরম পানির ভাপ নেওয়া ও পান করা, প্রচুর লেবুসহ ভিটামিন সি ও অন্যান্য ভিটামিন এবং পুষ্টিকর খাবার খেয়েছেন তারা। তারা কালোজিরা মধু দিয়ে অথবা ভাতের সঙ্গে সকালে গুঁড়া বা ভর্তা করে খেয়েছেন।

হোমিওপ্যাথির ব্যবহার

চৌধুরী হোমিও মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং চাঁদপুর হোমিও মেডিকেল কলেজের প্রভাষক বিপুল চৌধুরী বলেন, ইসকনে সেবায়েতদের আকা্রন্ত হওয়ার খবর শুনে তিনি তাদের জন্য ওষুধ দিয়েছিলেন।

“প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসার অংশ হিসেবেই তাদের হোমিও ওষুধ দেওয়া হয়। অন্যান্য পথ্যও তারা গ্রহণ করেন। তাদের কোনও ভেন্টিলেশন লাগেনি। সিরিয়াস কন্ডিশন হয়নি।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, “করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় আমরা এখনও কোনো হোমিও ওষুধের কথা বলি নাই।

“আমরা যে স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করেছি, তাতে তরল খাবার, গরম পানি পানের কথা বলেছি। কিন্তু হোমিওপ্যাথির কোনো ওষুধ খেয়ে সেরে যাবে, এমন কিছু বলিনি। ইসকন মন্দিরের কেউ হোমিওপ্যাথি খেয়ে সুস্থ হয়েছেন কি না, সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানি না।”

এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিকের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক বহু যুগের। এই দুই ওষুধের অনুসারীরা প্রত্যেকেই নিজেদের ওষুধকে সেরা মনে করেন।

বাংলাদেশে প্রায় অর্ধশতক ধরে হোমিওপ্যাথি নিয়ে গবেষণা ও চিকিসায় নিয়োজিত আছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন দেশের পরিবেশ ও রোগীদের লক্ষণ ভেদে বিভিন্ন ধরনের হোমিও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র লেখা হচ্ছে। হোমিওপ্যাথি, এটা নিরাপদ। এটা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করবে না।”