করোনা মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন দিশেহারা তখন দিশা দেখাচ্ছে আয়ুর্বেদ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় করোনামুক্তি ঘটছে বলে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দাবি করেছে ভারতের শীর্ষস্থানীয় পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ। বাংলাদেশেও হামদর্দ-এর তিনটি ওষুধ করোনা মোকাবিলায় মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইতোমধ্যে সতর্কতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিয়মিত গরম পানি, আদা চা পান করে শ্বসনতন্ত্র ও গলা নিরাপদ রাখার জন্য বলা হচ্ছে। কারণ এটি এ রোগ সংক্রমণের প্রধান পথ। এতে ফুসফুস আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে যাবে। একইসাথে গরম পানির ভাপ নিতে বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গণবিজ্ঞপ্তিতেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে হামদর্দ-এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গরম পানিতে পরিমাণমতো ইউনানী ওষুধ কুলজম দিয়ে ভাপ নিলে তা অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসু হবে। এমনকি উপসর্গ দেখা দিলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে এটি ব্যবহার করে সংক্রমণ নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হচ্ছে। সম্প্রতি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুল হক এমপি স্বাক্ষরিত এক অনুরোধপত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে করোনা উপসর্গে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছে।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ প্রাসঙ্গিক কিছু ভেষজ ওষুধ  দিয়ে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় ট্রায়াল দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং সংক্রমণের উপসর্গ নিরাময়ে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদিত হামদর্দ-এর ৩টি ইউনানী ওষুধের সফলতা পাওয়া গেছে। কুলজম গরম পানির বাষ্পের সাথে ব্যবহারের মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়া যাচ্ছে এবং আক্রান্তদের উপসর্গও দ্রুত নিরাময় হচ্ছে। ফেভনিল সিরাপ জ্বর নিবারক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক ও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাবর্ধক হিসাবে অত্যন্ত কার্যকরী। তার সঙ্গে এটি কাশি নিরাময়, কফ নিঃসারক এবং ফুসফুসের শক্তিবর্ধক হিসাবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

সারাদেশে হামদর্দ-এর ২৭০টি চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে হামদর্দ-এর চিকিৎসকগণ কোভিড-১৯ লক্ষণযুক্ত বা কোভিড পজিটিভ রোগীদের এই চিকিৎসা প্রদান করে সফলতা পাচ্ছেন। দেশব্যাপী ৫০ জন করোনা পজিটিভ রোগী এ চিকিৎসা নিয়ে নেগেটিভ হয়ে সুস্থ হয়েছেন। কোয়ারেন্টিনে থাকা ৭০০ জন মানুষ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।

কিভাবে এই ৩টি ওষুধ কাজ করে তার ব্যাখ্যা দেখা যাক। কোভিড-১৯ মূলত আমাদের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। নাক এবং মুখ দিয়ে আমাদের শ্বসনতন্ত্রে প্রবেশ করে প্রথমে শ্বসনতন্ত্রের উপরিভাগে অবস্থান করে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে।

এমতাবস্থায় কুলজম সহকারে গরম পানির বাষ্প গ্রহণ করলে কুলজমে থাকা শক্তিশালী জীবাণুনাশক উপাদান ক্যাম্ফোর, পাইন ওয়েল, ইউক্যালিপটাস ওয়েল এই ভাইরাসকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কুলজম অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একইসঙ্গে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর যে সকল উপসর্গ দেখা দেয় যেমন- ফুসফুসের প্রদাহ, কাশি, ফুসফুসের আবদ্ধতা কুলজমে বিদ্যমান উপাদানসমূহ অত্যন্ত কার্যকরীভাবে তা নিরাময় করে। কুলজম-এর ব্যবহার বিধি: ১ বাটি গরম পানির সাথে ৫ ফোঁটা কুলজম মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার নাক ও মুখ দিয়ে শ্বাস টেনে ভাপ নিন।

সিরাপ ফেভনিল জ্বর নিবারক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাবর্ধক হিসাবে অত্যন্ত কার্যকরী। ফেভনিল প্রদাহ প্রশমন করে জ্বর নিবারণ করে। ভাইরাসবিরোধী হিসেবে ফেভনিল-এর ভূমিকা প্রমাণিত। একইসঙ্গে ফেভনিল রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ফলে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায়ও এটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। ফেভনিল এর সেবনবিধি: প্রাপ্ত বয়স্ক: ৪ চা চামচ দৈনিক ২-৩ বার; অপ্রাপ্ত বয়স্ক: ২ চা চামচ দৈনিক ২-৩ বার অথবা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শমতো সেব্য।

সিরাপ সাদুরি মূলত কোভিড-১৯-এর উপসর্গ নিরাময়ে ভূমিকা রাখছে। ফুসফুস সংক্রমিত হওয়ার কারণে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কাশি, ফুসফুসের আবদ্ধতা এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সাদুরি ব্রংকোডায়লেটর হিসাবে শ্বাসনালীকে সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে কাশি এবং শ্বাসকষ্ট কমায়। এটি ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা নিঃসরণে সহায়তা করে ফুসফুসের আবদ্ধতা কমায়। একইসঙ্গে এটি ফুসফুসের শক্তিবর্ধক হিসাবে অত্যন্ত কার্যকরী। সাদুরি-এর সেবনবিধি: প্রাপ্ত বয়ষ্ক: ৪ চা চামচ দৈনিক ২-৩ বার, অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক: ২ চা চামচ দৈনিক ২-৩ বার অথবা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। তিনটি ওষুধ মিলে দাম পড়বে মাত্র ২০০ টাকা।