পালকি কী:

পালকি চাকাবিহীন এক ধরনের বিলাসবহুল যানবাহন যা কয়েকজন ব্যক্তি ঘাড়ে বহন করে পালকিকে ঝুলন্ত অবস্থায় স্থানান্তরে অগ্রসর হয়। যাতে সাধারণত ধনিকগোষ্ঠী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করে থাকে।

যিনি পালকি বহন করে নিয়ে যান, তাঁকে পালকি বেহারা নামে অভিহিত হয়। প্রথমদিকে দেব-দেবীকে আরোহণ কিংবা দেবমূর্তি বহনের উদ্দেশ্যে এরূপ যানবাহন তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। অনেক মন্দিরেই পালকি সহযোগে দেবতাদের বহনের দৃশ্যমালা ভাস্কর্য আকারে তুলে ধরার দৃশ্য চিত্রিত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে এতে করে মুখ্যত ইউরোপীয় উচ্চ শ্রেণির সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ও ভদ্রমহিলাগণ ভারতীয় উপমহাদেশে রেলগাড়ি প্রবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত চলাফেরা করতেন।

পালকি এর ইতিহাস:

আধুনিককালে পালকির ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবুও সীমিত আকারে ভারতীয় উপমহাদেশে বিবাহ অনুষ্ঠান, তীর্থযাত্রা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

প্রাচীন রোমে লেটিকা, চীনে জিয়াও, ভিয়েতনামে কিউ, ইংল্যান্ডে সিড্যান চেয়ার, স্পেনে লিটারা, ফ্রান্সে পালানকুইন, পর্তুগালে লিটেইরা, থাইল্যান্ডে ওহ, কোরিয়ায় গামা, জাপানে নোরিমোনো, তুরস্কে টাহটিরেভান ইত্যাদি নামে পালকি পরিচিত হয়ে আসছে।

ইউরোপে পালকিকে শোবার উপযোগী করে ছাঁদযুক্ত বা ছাঁবিহীন নির্মাণ করা হতো। দুইটি শক্ত খুঁটি সহযোগে প্রান্ত সীমায় পালকি বেহারা কিংবা ভারবাহী যন্ত্রের মাধ্যমে টেনে নেয়া হতো। ধারনা করা হয় যে, স্লেজচালিত গাড়ীর ধারনা থেকে পালকি পরিবহনটির বুৎপত্তি ঘটেছে। মিশরীয় অনেক চিত্রকর্মে এর প্রকাশ ঘটেছে। পরবর্তীতে তা পারস্য রাজ্যেও ব্যবহৃত হয়। এ সংক্রান্ত বিষয়াদি ঈশা সম্বন্ধীয় পুস্তকাদিতে তুলে ধরা হয়েছে। প্রাচ্য দেশসমূহে এ বাহনটি পালকিরূপে পরিচিতি পায়। মূলতঃ প্রাচীন রোমের সম্রাজ্ঞী এবং সিনেটরদের স্ত্রীদের ন্যায় সম্ভ্রান্ত বংশীয় এবং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে বরাদ্দ ছিল পালকি। কিন্তু সাধারণ লোকদের জন্যে এ পরিবহন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। সপ্তদশ শতকে ইউরোপে পালকি পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল; মজবুত নির্মাণশৈলী এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায়সহ উভয় খুঁটিতে চামড়ার বর্ম আচ্ছাদন করা হয়। পরবর্তীকালে গুরুতর অসুস্থ রোগী ও আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকেও পালকি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।