বাংলা সাহিত্যের এক বিখ্যাত কবিতা জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’। বোধহয় কবির থেকেও বেশি বিখ্যাত এই -বনলতা সেন। এই বনলতা সেনকে নিয়ে বিশ্লেষণের অন্ত নেই । আর জীবনানন্দ দাশের এই কবিতা নাটোরকেও করেছে বিখ্যাত। কারণ, কবিতায় বনলতা সেনের বাড়ি নাটোরে বলে উল্লেখ করেছেন কবি। জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘বনলতা সেন’ কবিতায় মাত্র তিনবার ‘বনলতা সেন’নামটি উল্লেখ করেছেন। 

কবি জীবনানন্দ দাশ কি কখনো নাটোরে গিয়েছিলেন নাকি বনলতা সেন শুধুই তাঁর কল্পনা তা নিয়েই রয়েছে অনেক প্রশ্ন? তবে নাটোরের মানুষের কাছে ‘বনলতা সেন’একজন রক্ত মাংসের মানুষ। নাটোরের স্থানীয়দের মুখে মুখে ‘বনলতা’ সেনকে ঘিরে অনেক অনেক কাহিনী শোনা গেলেও বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, এসব কাহিনীর কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রচলিত একটি কাহিনী থেকে জানা যায় আগে নাকি নাটোরের উপর দিয়ে দার্জিলিং যেতে হতো। জীবনানন্দ দাশ একদিন ট্রেনে দার্জিলিং যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি যখন নাটোর স্টেশনে থামে তখন নাকি এক অপরূপ সুন্দরী মেয়ে ট্রেনে উঠে এবং একজন বৃদ্ধাও ছিলেন মেয়েটির সঙ্গে তাঁর নাম ভুবন সেন। জীবনানন্দ দাশ যে কামরায় ছিলেন তাঁরাও সেই কামরায় উঠেছিলেন। বৃদ্ধা ভুবন সেন ছিলেন নাটোরের সকুল পরিবারে তারাপদ সকুলের ম্যানেজার। সেকালে সকুল পরিবার নাটোরের সম্ভ্রান্ত পরিবার ছিল। সুন্দরী মেয়েটির নাম ছিল ‘বনলতা সেন’ যিনি ভুবন সেনের বিধবা বোন ছিলেন। বৃদ্ধা ভুবন সেন একসময় ঘুমিয়ে যায় তারপরই কবির ‘বনলতা সেন’ এর সাথে আলাপ জমে উঠে। গল্প করে তাঁরা অনেকসময় কাটায়। একটা সময় বনলতা সেন নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যায় এবং ট্রেন থেকে নেমে যায়। কবি আবার একা হয়ে পরে তাঁর মন বিষন্ন হয়ে যায়। কবি তাঁর ‘বনলতা সেন ’কবিতায় একটি বিশেষ লাইন ব্যক্ত করেছেন - ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’।

গোপালচন্দ্র রায় নামের একব্যক্তি জীবনানন্দ দাশকে জিজ্ঞাসাও করেছিলেন, এই বনলতা সেন কে যার কথা আপনি আপনার কবিতায় লিখেছেন? বনলতা সেন নামের সত্যি কেউ ছিল আপনার পরিচিত? কবি কোনো জবাব না দিয়ে শুধুমাত্র একগাল মুচকি হেসেছিলেন।