শ্রী শ্রী মেহার কালীবাড়ি হলো বিশ্বের একমাত্র দশমহাবিদ্যা সিদ্ধ পীঠস্থান। এই পীঠস্থানে মহাসাধক সর্বানন্দ দেবের সাধনায় তুষ্ট হয়ে দেবী পার্বতী তাঁর দশ মহা রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি বা মেহারে এই কালীমন্দির অবস্থিত।

মহাতীর্থ এই মেহের কালীবাড়িকে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। পুরাকালে মেহের কালীবাড়ি ছিল মাতঙ্গ মুনির আশ্রম, যেখানে মাতঙ্গ মুনি স্থাপন করেছিলেন ‘মতঙ্গেশ শিব লিঙ্গ’যা বর্তমানকালে পাতালগামী। মহাসাধক সর্বানন্দ মায়ের ইচ্ছায় অষ্টম বাড়ের মত জন্ম নেন এই মেহের কালীবাড়িতে। কিন্তু এই মহাসাধক ছেলে বেলা থেকেই ছিলেন সহজ-সরল, উদাসীন এবং নিরক্ষর। ১৪২৬ সনে সর্বানন্দের বড় ভাই ছিলেন মেহার রাজসভার সভাপন্ডিত। সর্বানন্দ ভাইয়ের পরিবর্তে একদিন সভায় যান। কল সভাসদ গণ তাঁর সরলতা দেখে তাঁকে নিয়ে মজা করেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় সেদিন কোন তিথি ছিল? কিন্তু সর্বানন্দ সঠিক তিথি জানতেন না,তবুও তিনি উত্তর দেন আজ পূর্ণিমা তিথি। কিন্তু সেদিন ছিল আমাবস্যা তিথি। সেদিন সেই সভায় সর্বানন্দকে অনেক তিরস্কার করা হয়। সেদিন তিনি এতটাই ব্যথিত হন যে নিজের মূর্খতা দুর করবেন সিদ্ধান্ত নেন এবং নির্জনে চলে যান। 

Sri Sri Meher Kali Bari, Chittagong (+880 1715-736595)

তিনি যখন নির্জনে বাস করছিলেন তখন একদিন সন্ন্যাসী রূপে দেখ দেন মহাদেব এবং তাঁকে সর্বসিদ্ধিমন্ত্র শিখিয়ে দেন। সন্ন্যাসী রূপী মহাদেব আরো বলেন মতঙ্গেশ জীনবৃক্ষমূলে শবের উপর বসে এ মন্ত্র জপ করলে ইষ্ট দেবতার দর্শন পাবেন এবং সকল মনোবাসনা পূর্ণ হবে। এই সময় তিনি সাধনসঙ্গী হিসেবে পান পূর্নানন্দ দেবীকে। দুজনে মিলে দৈব সাধনস্থান খুঁজতে শুরু করেন এবং একজন মুসলিম পীরের সাহায্যে তাঁরা সাধনস্থান খুঁজে পান। কিন্তু তখন সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো শবদেহ কারণ,সাধনার জন্য শবদেহ  কোথায় পাবে। এইসময় পূর্নানন্দ বললেন তিনি তাঁর যোগবলে দেহত্যাগ করে আবার মায়ের কৃপায় বাহ্যজ্ঞানে ফিরে আসতে পারেন। অবশেষে,সর্বানন্দ পূর্নানন্দের শবের উপর বসে সাধনা শুরু করলেন। সাধনার সময় সর্বানন্দকে দিতে হয় অনেক কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু তিনি সব পরীক্ষায় জয় লাভ করেন এবং কামদেবকেও পরাস্ত করেন। একদিন ব্রক্ষপ্রহরে (রাতের শেষ প্রহরে) মা তাঁর  প্রতি তুষ্ট হয়ে তাঁকে দর্শন দেন। মা তাঁকে বর প্রার্থণা করতে বললে তিনি পূর্নানন্দের বাহ্যজ্ঞান ফিরে চাইলেন এবং দুজনে মায়ের দশমহাবিদ্যা রূপ দর্শনের প্রার্থণা করলেন। মা প্রথমে তাঁদের দেখা দিতে চাননি। কিন্তু তাঁদের কঠিন তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মা তাঁর-কালী , তারা , ষোড়শী , ভুবনেশ্বরী , ভৈরবী , ছিন্নমস্তা , কমলা, বগলা , ধুমাবতী এবং মাতঙ্গী - এ দশবিধরূপে ঠাকুর সর্বানন্দ ও পূর্নানন্দকে দর্শন দিলেন।

শ্রীশ্রী মেহার কালীবাড়ী - Hindu Temple in ...
 
মায়ের এই রূপ দেখে মহাদেব স্বয়ং স্থির থাকতে পারেনি কিন্তু সাতজনমের সাধনার ফলস্বরূপ সাধকদ্বয় মায়ের দর্শন পেলেন। সর্বানন্দের পূর্ব অপমানের যন্ত্রণা সইতে না পেরে মা সেদিন অমাবস্যার রাতে পূর্নিমার চাঁদের আলোয় অলোকিত করেন মেহার কালীবাড়িসহ সারা দেশ। যাঁর সাক্ষ্য হলেন তৎকালীন মেহারবাসী। সেই থেকে মেহার হলো দশমহাবিদ্যা সিদ্ধ পীঠস্থান। মেহার কালীবাড়িতে মাকে পরমা প্রকৃতি রুপে ঐ বৃক্ষতে পূজা করা হয়।  আজও কোনো মানুষ হিন্দু বা মুসলিম কেউ জুতা পায়ে মন্দিরের আঙ্গিনায় প্রবেশ করেন না। কালী পূজার দিন মেহার কালীবাড়িতে অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে।

আরও পড়ুন: