তিনি সকলের প্রিয় শেফালী মাসী। কক্সবাজার জেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁহ বাজারের অলিগলি, পথে-প্রান্তে খবরের কাগজের বোঝা হাতে নিরন্তর ছুটে চলা ৭৫ বছর বয়সী এক সংগ্রামী বৃদ্ধা মা।

মধ্যযৌবনেই সিঁথির সিঁদুর মুছে গেছে তাঁর। বিধবার তিলকে রাজটীকা হয়ে উঠেছিল একমাত্র পুত্র স্বপন পাল। পুত্র স্বপনকে ঘিরে বেড়ে উঠা স্বপ্নগুলি রাঙানোর কোন কমতি রাখেননি তিনি। স্বপনকে পড়ালেখা শিখিয়েছিলেন নিম্ন মধ্যবিত্তের সর্বোচ্চ সীমারেখার মধ্যে। স্বপনই একদিন শিক্ষিত হকার হয়ে হাল ধরে শেফালী সংসারে। বিয়ে করে সংসারী হয় স্বপন। ঘর আলো করে নাতি নাতনী আসে শেফালী পালের সংসারে। পুত্র,পুত্রবধু আর নাতি-নাতনী নিয়ে বেশ চলে যাচ্ছিল শেফালীর একান্নবর্তী সংসার।

হঠাৎ একদিন, সেই পুত্র স্বপনও দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পুত্র স্বপনের প্রয়াণ শোক কাটিয়ে উঠার আগেই চুলায় ভাতের হাড়ি চড়াতে শেফালী পাল নেমে পড়লেন পত্রিকা বিক্রির পেশায়। কারো দয়া- দাক্ষিণ্যে কিংবা করুণার আর্দ্রতায় ভিজেনি পুত্রশোকাতুর বিধবা শেফালী পালের কপর্দকহীন দুই হাত। সেই শূণ্য দু’হাতে তুলে নিলেন সংবাদপত্র। তুলে নিলেন সংসারের জোয়াল-লাঙল-ঘানি। সংসারের অচল চাকা সচল হলো, পেল গতি। আর সেই গতিতেই বেড়ে উঠে স্বপনের দুই সন্তান।

গত ১২/১৩ বছর ধরে এভাবেই পত্রিকার বোঝা হাতে এই দোকান থেকে সেই দোকান, পথ থেকে ফুটপাথে, জনবহুল জংশন কিংবা ব্যস্ততামুখর স্টেশনে স্টেশনে চলছে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা নারী শেফালী পালের এই হকার জীবন।

কারো আর্থিক সাহায্য কিংবা করুণা চান না তিনি। সমাজের মানবিক হৃদয়ের মানুষের কাছে শুধু তার একটাই চাওয়া, সদ্য এইচএসসি পাশ করা নাতনী আর স্বল্প শিক্ষিত নাতির জন্য চলনসই দুইটা চাকরি। উনার নাতি নাতনী একবার স্বাবলম্বী হয়ে গেলে পত্রিকা বিক্রির পেশা থেকে অবসর নিয়ে বাকি জীবনটা একটু বিশ্রামে কাঁটাতে চান। শেফালী পালের জীবনের ৭৫ টি বছর পার হয়ে গেছে, একটু জিড়োবার সুযোগ উনাকে দেওয়া যায়না???

নিলয় চক্রবর্তী।