পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন নিয়ে এবার যতটা তোড়জোড় হচ্ছে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার পর সম্ভবত: এমনটি হয়নি। বামদের হারিয়ে মমতা ব্যানার্জী যখন ক্ষমতাসীন হ’ন, তখন কিছুটা আলোড়ন হয়েছিলো, কিন্তু সেটি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যায়নি, এবারকার নির্বাচনী হাওয়া বিশ্বব্যাপী বইছে। এজন্যে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী সংগঠন ‘হিন্দু কোয়ালিশন ঘোষণা দিয়েছে, বিজেপি জিতলে তাঁরা ২রা মে উৎসব ও মিষ্টি বিতরণ করবে। হাবড়ার ডাঃ দীপক শর্মা লিখেছেন, ‘হিসাব দিলাম, লিখে রেখো, ২রা মে মিলিয়ে নিও। তাঁর হিসেবটা জবরদস্ত, তৃণমূল ৪৮-৫৮; জোট ২২-২৬, বিজেপি ১৯০-২০৬, অন্যান্য ২-৪। অনেকেই বলছেন, অতটা হয়তো হবেনা, তবে বিজেপি সরকার গঠন করছে, তা নিশ্চিত। মোদী তো বলেই দিয়েছেন, তিনি শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।   
 
২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র বিজয়ের পর লিখেছিলাম, ‘মোদির বিজয়, বাংলায় বিজেপি আসছে’। যুগশঙ্খে ৫ই জুন ২০১৯, এবং ঢাকায় ৮ই জুন দৈনিক ভোরের কাগজে তা ছাপা হয়েছিলো। এতে বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জীর অবস্থা শোচনীয়। বাংলা থেকে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট বিদায় নিয়েছে, এবার তৃণমূলের যাবার পালা। ২০১৯-র নির্বাচনটি ছিলো নরেন্দ্র মোদী ভার্সেস রাহুল গান্ধীর মধ্যে রেফারেন্ডাম। মোদী সুনামী রাহুলকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এবারকার নির্বাচনটি হচ্ছে, মোদী ভার্সেস মমতা। ২রা মে টের পাওয়া যাবে মোদী ম্যাজিক কতটা সফল। রাহুল গান্ধী টিকে আছেন, মমতা কি রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবেন? ভারতীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। বাংলার দৃশ্যপট আরো দ্রুত পাল্টাবে। 
 
ভোট প্রায় শেষ। ভোটে ব্যাপক উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, মানুষ পরিবর্তন চায়। ভোট নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাঁরা জানেন, ভোটার উপস্থিতি যখন আশাতীত হয়, সেই ভোট সচারচর ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে যায়? পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৭-র পর ২০১৯-এ প্রথম কোন জাতীয় দল (বিজেপি) এতটা ভালো করতে সক্ষম হয়। মমতা ব্যানার্জীর তখনি বোঝা উচিত ছিলো, বিজেপি আসছে। তৃণমূলের বর্ষীয়ান সম্পাদক চন্দন মিত্র তখন বলেই ফেলেছেন, ‘বিজেপি ইজ এ গভর্নমেন্ট ইন ওয়েটিং’। ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান মমতাকে কুপোকাৎ করে ফেলেছে। ৮-দফা ভোট তৃণমূলের ক্যাডার ও মমতার প্রশাসনকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন আবারো প্রমান করেছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে তাঁরা কাউকে পরোয়া করেন না। 
 
পশ্চিমবঙ্গ বাম বলয় ছেড়ে ডানে ঝুঁকছে। ‘খেলা হবে’ -খেলা যথেষ্ট হয়েছে, এবার সাঙ্গ হবে খেলা। আচ্ছা, বিজেপি যদি হারে এবং যদি মমতা নন্দীগ্রামে হারেন, তাহলে কি হবে? বিধানসভা ত্রিশংকু হবে তা বলা বাহুল্য, ফিরহাদ হাকিম মুখ্যমন্ত্রী? তাঁর পক্ষে থাকবেন বামে’র মোহাম্মদ সেলিম, কংগ্রেসের আবদুল মান্নান, আর আইএসএফ’র আব্বাস সিদ্দিকী। অধীর চৌধুরী বা সুজন চক্রবর্তী’র খবরও থাকবে না? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিজেপি’র পরাজয় মানে পাকিস্তান ও চীনের বিজয়! সংক্ষেপে পশ্চিমবঙ্গে এবারকার নির্বাচন মূলত: বাঙ্গালী হিন্দু’র অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। ভোটার সেটি বুঝলে হয়! ধারণা করা যায়, ভোটার বুঝেছেন, বিজেপি জিতছে, দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছে।