আমি একজন আইনের শিক্ষক ও ছাত্র হিসেবে যা বুঝি তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া জরুরি মনে করছি।

শুরুতেই বলে নিই, আমি পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অংশের পক্ষে একমত। প্রস্তাবিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সবথেকে আলোচিত অংশ এটি।

প্রথমেই একটি কথা বলে নেয়া দরকার তা হল এই খসড়াটি অত্যন্ত কাঁচা হাতের। আইন প্রণয়নের সময় প্রতিটি শব্দচয়ন ও ভাষা প্রয়োগে (এমন কি বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও) খুবই যত্নশীল হওয়া উচিত, যার প্রতিফলন এখানে ঘটেনি।

উদাহরণস্বরূপ, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার একটি পরিচ্ছেদ দেখা যাক।

গ. ধর্মান্তরিত ব্যক্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ

কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ) যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি গ্রহণ করার পূর্বে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ধর্মান্তরিত না হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশটি তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সমান অংশ পাবেন।

কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ) যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি গ্রহণ করার পর অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ধর্মান্তরিত না হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন।

এখানে দুইটি বাক্যই যথেষ্ট অগোছালো। যেমন, প্রথমে বলছে কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজড়া ধর্মান্তরিত হলে, সে পাবে না, কিন্তু তার স্ত্রী পুত্র ও কন্যা তার সম্পত্তির অংশ পাবে। এখানে ‘স্ত্রী’র পাশাপাশি ‘স্বামী’ শব্দটা ব্যবহারই করা হয়নি। প্রশ্ন হলো, নারী ধর্মান্তরিত হলে তার স্বামীর ক্ষেত্রে কী হবে তা এ খসড়ায় বলা হয়নি। অর্থাৎ শুধুমাত্র ধর্মান্তরিত পুরুষকে টার্গেট করে বাক্যটা লেখা হয়েছে। ধর্মান্তরিত নারীর জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে না কিনা তা ধোঁয়াশা থেকে গেছে। হিন্দু নারীদেরই যে বেশির ভাগ সময় ধর্মান্তরিত হতে দেখা যায়, এ তো সবাই জানে। সুতরাং হিন্দু নারী ধর্মান্তরিত হলে তাদের জন্য প্রচ্ছন্ন আনুকূল্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

হিসেব দাঁড়ায় যে, হিন্দু পুরুষ যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার পূর্বে ধর্ম পরিবর্তন করেন তবে তিনি সম্পত্তি পাবেন না, পাবে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা। খুবই ভাল কথা। কিন্তু দ্বিতীয় বাক্য অনুযায়ী, তিনি যদি সম্পত্তি পাওয়ার পর অন্য ধর্মের কোন নারীকে ভালোবেসে বিয়ে করতে কিংবা স্রেফ নিজের ইচ্ছায় হিন্দু স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে ত্যাগ করে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে চলে যান, তখন হিন্দু ধর্মে থেকে যাওয়া নিরপরাধ স্ত্রী, পুত্র-কন্যা পৈত্রিক সম্পত্তি পাবে না। কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়ার পরও পিতার সম্পত্তি হিন্দু পুরুষটিরই থাকবে। অন্যদিকে তার অহিন্দু স্ত্রী এবং তার গর্ভজাত পুত্র-কন্যাও ধর্মান্তরিত পুরুষের পিতার সম্পত্তির অধিকার পাবে। বঞ্চিত থাকবে তার প্রথম পক্ষের হিন্দু স্ত্রী-সন্তানরা। যে হিন্দু নারীদের প্রতি এত দরদ দেখিয়ে আইন করা হচ্ছে, সেই হিন্দু নারীরা কিন্তু বঞ্চিতই থেকে গেল।

মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, হিন্দু নারী বা পুরুষ তাদের স্বামী/স্ত্রী ও পুত্র-কন্যাকে রেখে অন্যের সাথে ধর্মান্তরিত হয়ে চলে যায়। আবার ভিন্নধর্মে প্রেমের টানে আপনজনকে খুন কিংবা আইনি বা সামাজিকভাবে হয়রানি করার ঘটনাও ঘটে। আপনারা মনে হয় রংপুরের সেই প্রভাবশালী হিন্দু উকিলের কথা ভুলে যান নি, যার স্ত্রী এক মুসলিম সহকর্মীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে নিজের স্বামীকে মেরে মেঝেতে পুতে রেখেছিল। আবার কিছুদিন আগে দেখলাম, পিরোজপুরে এক হিন্দু পুরুষ তার স্ত্রী ও পুত্র-কন্যাকে রেখে ধর্মত্যাগ করে চলে গেছে। মুসলিম নারী বিয়ে করে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এই সকল ক্ষেত্রে এই খসড়া আইনের ভাষ্য অনুযায়ী পরিত্যাক্তা হিন্দু স্ত্রী ও তার সন্তানরা স্বামী ও শ্বশুরের কিছুই পাবে না, পাবে অন্য পক্ষের অহিন্দু স্ত্রী-সন্তানরা। আমার নিজের গ্রামের একটা ঘটনা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি।

আমাদের গ্রামের এক হিন্দু ডাক্তারের মেয়ের বিয়ে হয়েছিল এক হিন্দু ছেলের সাথে। কিছু বছর সংসার করার পর এক অহিন্দু ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে মেয়েটা। এই ঘটনার পূর্বে ঐ ডাক্তার মারা যায়। যেহেতু মেয়ে হিন্দু থাকা অবস্থায় বাবা মারা গিয়েছিল, সেহেতু এই আইন যদি থাকত তবে সে সম্পত্তি পেত। আর পরে সে যখন অহিন্দু প্রেমিকের হাত ধরে চলে গেল, তখন তার সাথে সাথে বাবার থেকে পাওয়া সম্পত্তিও চলে যেত ঐ অহিন্দু স্বামী ও তার ঔরসে জন্ম নেওয়া অহিন্দু পুত্র-কন্যার কাছে। আর তার পূর্বের পক্ষের যে হিন্দু স্বামী ও পুত্র-কন্যা আছে তারা কিছুই পেত না।

এরপর আসি আর একটা মারপ্যাঁচে। খসড়াতে বলছে, অন্য ধর্ম গ্রহণ করলে সে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। নাহলে নয়। এক্ষেত্রে হিন্দু-অহিন্দু বিবাহের ক্ষেত্রে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে হবে বেশি। তাহলে যে যার ধর্ম পালন করতে পারবে। যেহেতু সন্তান ধর্মান্তরিত হয়নি, সুতরাং উত্তরাধিকার সূত্রে মা-বাবার সম্পত্তি ঠিকই পেয়ে যাবে অহিন্দু বিয়ে করা সন্তানটি। সম্পত্তি পেয়ে যাওয়ার পর ওই সন্তানের অহিন্দু স্বামী/স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে যদি ধর্মান্তরের চাপ আসে এবং সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য কিংবা সঙ্গীর ধর্মবিশ্বাসে প্রভাবিত হয়ে তাদের ধর্ম গ্রহণ করতে হতেই পারে। সেক্ষেত্রেও হিন্দু পিতা-মাতার সম্পত্তির মালিকানা অহিন্দু পরিবারে চলে যাবে।

সবশেষে আইনের আর একটা প্যাঁচ খুলে দিই। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোন নারী বা পুরুষ সম্পত্তি পাওয়ার আগে অন্য ধর্মে যায়, কিন্তু তার স্বামী/স্ত্রী ও পুত্রকন্যা যদি ধর্মান্তরিত না হয় তবে ঐ ধর্মান্তরিত না হওয়া স্বামী/স্ত্রী ও তার পুত্রকন্যা সম্পত্তি পাবে, কেবল ধর্মান্তরিত হওয়া ব্যক্তিটি সম্পত্তি পাবে না। ধরে নিন, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে রূপনগরের অহিন্দু রাজকুমারের সাথে বিয়ে করল। জ্যোৎস্না যেহেতু ধর্ম ত্যাগ করেছে তাই সে তার বাবার সম্পত্তি পাবে না। কিন্তু ঐ রাজকুরার তো তার ধর্ম ত্যাগ করেনি, সে তার পূর্বের ধর্মেই আছে (শুরু থেকেই তো সে অহিন্দু) তাই এই আইনের ভাষ্য অনুযায়ী সে জ্যোৎস্নার ভাগের সম্পত্তিটা জ্যোৎস্নার বাবার থেকে পাবে। যার জন্য জ্যোৎস্না নিজে বাবার সম্পত্তি পেল না, সে কিন্তু ঠিকই সম্পত্তি পাচ্ছে। নিজের পুত্রকন্যা ভিন্নধর্মী হলে সম্পত্তি পাবে না, কিন্তু তাদের স্বামী বা স্ত্রী ভিন্ন ধর্মী হলেও ঠিকই শ্বশুরের থেকে সম্পত্তি পাবে। এমনই বিদঘুটে হয়েছে এই আইন।

এইবার আসি মূল প্রসঙ্গে। নারীদের সম্পত্তি ভাগ নিশ্চিত করা এই খসড়ার মূল বক্তব্য। বিশেষ করে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা নারীদের জন্য। আমি এই যুক্তি এবং পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অংশের পক্ষে একমত। কিন্তু যে স্বামী পরিত্যাক্তা নারীদের জন্য এতকিছু তাদের কি আখেরে কোন লাভ আছে এই আইনে? না নেই। উদাহরণ দিচ্ছি। আবার আসি সেই বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার প্রসঙ্গে। ধরে নিন জ্যোৎস্না ধর্ম ত্যাগ করে অহিন্দু রাজকুমারকে বিয়ে করার কারণে বাবার সম্পত্তি পেল না। আবার রাজকুমারও বিয়ের দুই তিন বছরের মাথায় অন্য মেয়েকে বিয়ে করে জ্যোৎস্নাকে ডিভোর্স দিল। তখন জ্যোৎস্না কোথায় যাবে, কি নিয়ে থাকবে?

আরও আছে। শুধু অহিন্দু নয়, হিন্দু স্বামীও এবার স্ত্রীর সম্পত্তির জন্য লালায়িত হয়ে উঠতে পারে। হিন্দু সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতা নিশ্চিতভাবেই বেড়ে যাবে। স্ত্রী তার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে কিংবা স্নেহবশে কিংবা পিতার সামান্য সম্পত্তিটুকু অখণ্ড রাখতে যদি সেই সম্পত্তি নিতে অনাগ্রহী হয়, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া স্ত্রীর প্রাপ্ত সম্পত্তি তার স্বামী নানান অজুহাতে ব্যবহার করতে পারে। সম্পর্ক ও সংসার টিকিয়ে রাখতে নারীরাই যুগ যুগ ধরে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে থাকে। এবারও স্বামীকে নিজের সম্পত্তিটুকু দিয়ে সম্পর্ক ও সংসার টিকিয়ে রাখতে কিংবা সংসারের উন্নতি করতে প্রয়াসী হবে স্ত্রীরা। স্ত্রীর সম্পত্তি ভোগ শেষে যদি অধিকতর ধনী পিতার কন্যার প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে ঘরের বউতে ডিভোর্স দেয় সেই স্বামী? তখন তার প্রথমা স্ত্রীর কী গতি হবে? পূর্বের নিয়মে বাবার সম্পত্তিতে ভাগ না নেওয়ায় মানবিক কারণে ভাইয়েরা আশ্রয় ও ভরণ-পোষণ দিয়ে থাকত। কিন্তু এবার তো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়ে গেছে, সুতরাং ভাই তাকে আশ্রয় না দিতেই পারে। তাহলে কোথায় যাবে সেই নারী? সুতরাং সেই সংকট থেকেই যাচ্ছে।

অতএব, নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদা, সুন্দর জীবন নিশ্চিত ও ধর্মান্তর রোধে আমার কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আছে। এগুলো ভেবে দেখার আহ্বান রইলো।

১) যৌতুক পুরোপুরি বন্ধ হবে - এটা নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে প্রথমে বিয়েতে যৌতুক আর পরে বাবার সম্পত্তিতে সমান ভাগ, এই নিয়ে ভাইবোনের সম্পর্কগুলো নরকের যন্ত্রণার সৃষ্টি করবে। যদি বিয়েতে যৌতুক প্রদান হয়ে থাকে তবে তা সম্পত্তি বণ্টনের সময় বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানেই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিপত্তি। আপনি যদি মা-বাবার সম্পত্তি বণ্টনের সময় যৌতুকের বিষয় বিবেচনায় আনেন তবে, প্রকারান্তরে যৌতুককেই বৈধতা দান করা হয়, যা বাঞ্ছনীয় নয়। আর যদি যৌতুকের বিষয় বাদ দেন তবে ভাইয়েরা সম্পত্তিতে ন্যায্যতা পায় না। এমন কি একাধিক বোনের ক্ষেত্রে, বোনেদের মাঝেও ন্যায্যতা নিশ্চিত হয় না। কারণ বিভিন্ন কারণে এক এক মেয়ের বিয়ের জন্য পরিবারকে এক এক পরিমাণ যৌতুক দিতে হয়। কোন মেয়ের বিয়েতে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়, কোন মেয়ের বিয়েতে ১ টাকাও দিতে হয় না। এরপর যখন তাদের মধ্যে সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ করে দিবেন তখন ন্যায্যতা কীভাবে হবে?

২) সম্পত্তি পাওয়ার আগে হোক বা পরে, যখনই কোন ব্যক্তি ধর্ম ত্যাগ করবেন তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সকল সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবেন। যদি ইতোমধ্যে গ্রহণ করেও থাকেন তবে তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন, অন্যথায় তার স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি ক্রোক করে সরকারী পাওনা আদায়ের মতো করে উসূল করতে হবে। অহিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্রে এমনটা আদৌ সম্ভব কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে।

সংখ্যালঘুরা অধিকাংশ দেশে কিছু সুরক্ষা পেয়ে থাকে। সংখ্যালঘুদের কল্যাণার্থে রাষ্ট্রীয় কিছু উদ্যোগ থাকে। এটাই স্বাভাবিক। যেমন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে সংখ্যালঘু বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় রয়েছে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মতো বিভিন্ন রাজ্যে আরও কিছু মন্ত্রক ও অধিদপ্তর রয়েছে যা সংখ্যালঘুদের কল্যাণার্থে নিবেদিত। তাদের বাজেটও থাকে অনেক। পাকিস্তানের মতো অসভ্য দেশেও রয়েছে সংখ্যালঘুদের জন্য মন্ত্রণালয়। শ্রীলঙ্কায় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্যই পৃথক মন্ত্রণালয় রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন বা সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করাসহ বেশকিছু জোরালো দাবি বহুদিন ধরেই করছে হিন্দু সংগঠনগুলো। এই বৃহত্তর দাবিগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে শুধুমাত্র পারিবারিক ও উত্তরাধিকার বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে অনেক হিন্দু সংগঠন এবং সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না।

৩) বিবাহের সাথে সাথেই স্বামীর সম্পত্তিতে হিন্দু স্ত্রীর অর্ধেক অধিকার জন্মাবে। মিতাক্ষরা মতবাদে যৌথ পরিবারিক সম্পত্তি আইনে এই বিধি আছে। সেটাকেই আমরা এখানে আনতে পারি। কোন হিন্দু নারী যদি ধর্মান্তরিত না হয়ে (বিশেষ বিবাহ আইনে) অহিন্দু কাউকে বিয়ে করেন, সেখানেও এই নিয়ম কার্যকর করতে হবে। উক্ত স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হলে তার অর্ধেক সম্পত্তি ডিভোর্সের সময়েই প্রদান করতে হবে।

হিন্দু নারীর অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাই প্রস্তাবিত আইনের লক্ষ্য। আমি মনে করি, আমার এই তিনটি প্রস্তাব যুক্ত হলেই হিন্দু নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, হিন্দু পরিবারের সুরক্ষা এবং নারীর অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। অন্যথায় প্রস্তাবিত খসড়ার ফাঁক-ফোকর দিয়ে হিন্দু নারী ও সুরক্ষিত পরিবার ব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

 

সুপ্রভাত পাল

সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়