ঢাকা: বাংলাদেশে হিন্দু সংগঠনগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখেও হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ’। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদারকে সভাপতি এবং সাংবাদিক পুলক ঘটককে সাধারণ সম্পাদক করে ‘বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হয়েছে।

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রথানির্ভর হিন্দু আইন সংস্কারের লক্ষ্যে হিন্দু, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নাগরিকদের সমন্বয়ে এক ভার্চুয়াল সমাবেশে এ পরিষদ গঠিত হয়।

সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠন পরিচালনার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১০১ সদস্যে উন্নীত করা হবে। নবগঠিত এই সংগঠন হিন্দু আইন সংস্কারের জন্য অধিকতর গবেষণা, আলাপ আলোচনা, জনমতগঠন ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালনা করবে।

প্রাথমিকভাবে পাঁচটি দাবি নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ-

  • হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ,
  • অভিভাবকত্ব আইনের লিঙ্গ বৈষম্য নিরসন,
  • দত্তক আইনের লিঙ্গ ও বর্ণবৈষম্য নিরসন,
  • বিবাহ বিচ্ছেদ আইন প্রণয়ন এবং
  • বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা

এসবের মধ্যে উত্তরাধিকার আইনে সমতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এক নম্বর দাবি হিসেবে গুরুত্ব পাবে।

৩৫ সদস্যের কমিটিতে আরও রয়েছেন সহ-সভাপতি রিনা রায়, সুভাষ সাহা, অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহা, যুগ্ম সচিব পদে ড. সঞ্চিতা গুহ, ড. নিরু বড়ুয়া, কোষাধ্যক্ষ পদে পুলক রাহা, দপ্তর সম্পাদক পদে মিতা রানী রায় চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক পদে সমীরণ রায়, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ছন্দা রায়।

এছাড়া সদস্য পদে রয়েছেন- অজয় দাশগুপ্ত, তপন চক্রবর্তী, সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, দীপালি চক্রবর্তী, মধুমিতা বড়ুয়া, চিত্রা রায়, কনক বিশ্বাস, ঈশানী চক্রবর্তী, ডা. শিলা সেন, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, ড. কেশব কুমার অধিকারী, গোকুল কৃষ্ণ পোদ্দার, স্বপ্না রাণী বিশ্বাস, সুমনা গুপ্ত, শিপ্রা গোস্বামী, চন্দন চক্রবর্তী, রাজেশ পাল, গীতা বিশ্বাস, এম কে আচার্য রাকেশ, পিন্টু সাহা, বাবলা সেন গুপ্ত, লক্ষ্মী রানী বাড়ুই, অজন্তা দেব রায় ও সুস্মিতা দে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে হিন্দু পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন সংস্কার নিয়ে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। আইন মন্ত্রণালয়েও এ বিষয়ে একটি খসড়া আইন জমা দিয়েছে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ নামক এনজিও। এর বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, জাতীয় হিন্দু মহাজোট, হিন্দু পরিষদসহ প্রায় চল্লিশটি হিন্দু সংগঠন। তাদের তীব্র বিরোধিতার মুখেই এবার হিন্দু আইন সংস্কারের লক্ষ্যে এই হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ গঠিত হলো। 

আরও পড়ুন: 

>> হিন্দু সম্প্রদায়ের শান্তি-ঐতিহ্য ধ্বংস করতে চায় কয়েকটি এনজিও

>> হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কারে কার স্বার্থ কতটুকু?

>> প্রস্তাবিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের মারপ্যাঁচ

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ