মানবসভ্যতার শুরু থেকেই পুরুষরা দাড়ি রাখছে। কালের বিবর্তনে নানা ফ্যাশনের রূপ নিয়েছে এই দাড়ি। আদিম মানুষ পাথর ঘষে আগুন লাগাতে শেখে। সেই সঙ্গে শিখে নেয় দাড়ি কাটার কৌশলও। পুরুষদের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে দাড়ির বিকল্প নেই। গাল ভরা চাপ দাড়িতে পুরুষরা যেন হয়ে উঠে আরও আকর্ষণীয়।

বাবার গাল ভরা দাড়ি দেখে, ছোট ছেলের মনেও আকাঙ্ক্ষা হয় দাড়ি রাখার। বাবার অগোচরে দাড়ির কাটার যন্ত্রটি নিয়ে নিজের খালি গালে সেভ করছে ছোট ছেলেটি। এমন ঘটনা কিন্তু প্রায় ঘরেই ঘটে। অনেকেই বড় হয়ে এই স্মৃতি মনে করে হেসেও দিচ্ছেন। ছোটবেলা থেকে যেই শখ মনে লালন করে আসছেন পুরুষরা, বড় হয়ে সেই শখই মিটিয়ে নিচ্ছেন। চাপ দাড়ি পেতে রীতিমতো ভিন্ন ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। আবার অনেকে ছোট দাড়িকেই নানা স্টাইলে গালে সাজিয়ে নিচ্ছেন।

৪ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব দাড়ি দিবস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম শনিবার পালিত হয় এই দিবসটি। বিশ্বজুড়ে দাড়ি প্রেমিদের জন্য দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে। ন্যাশনাল ডে ক্যালেন্ডারের তথ্যমতে, ২০১০ সালে দিনটির যাত্রা শুরু হয়।

দিবসটির শুরুর কথা তো জানা হলো, কিন্তু দাড়ি নিয়ে কিছুমজার তথ্য কি জানেন? শখের বশে দাড়ি রাখছেন কিংবা বংশ পরমপরায়, দাড়ি কিন্তু কিছু বৈশিষ্ট্য বহন করে। 

বিশ্বজুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, যাদের দাড়ি আছে, তারা কম হিংসুটে ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তারা অন্যের সঙ্গে অযথা ঝামেলায় জড়াবে না। তথাকথিত 'ছ্যাবলামো' করবে না। মানুষের সঙ্গে একবার মিশে গেলে তার সঙ্গে বেশ উপভোগ্য হয়। এককথায় বলতে, দাড়িটা ওই মানুষদের ব্যক্তিত্বকে চাদরে ঢেকে রাখার মতো কাজ করে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, যিনি পৃথিবীতে ৬০ বছর বেঁচে থাকেন, তিনি প্রায় ৩৫০০ ঘণ্টা সময় নষ্ট করেছেন দাড়ি কাটতেই! মানে পুরো জীবনের প্রায় ৬ মাস চলে যায় শুধু দাড়ি কাটার পেছনেই।

মানুষের মনস্তত্ব পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, বেশিরভাগ পুরুষই নিজে দাড়ি রাখতে বেশি  আগ্রহী। কিন্তু সে যখন দাড়ি কেটে ফেলে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাখ্যাটা থাকে কোনও মহিলাকে 'ইমপ্রেস' করা। কারণ অধিকাংশ মেয়েরা ছেলেদের মুখের আগোছালো দাড়ি পছন্দ করেন না।

ফোর্বসের বিচারে বিশ্বের সবথেকে ধনী মানুষের তালিকায় ১০০ জনের মধ্যে গড়ে ৯৮ জনের মুখ একেবারেই দাড়ি নেই। মানে দাড়ি ওয়ালা ব্যক্তিরা ধনীদের তালিকায় অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।

২০০৮ সালের পর থেকে সারা বিশ্বে মুখে দাড়ির 'ট্রান্সপ্লান্ট' ৬০০ শতাংশ হারে বেড়ে গিয়েছে! কারণ ২০০৮ সালের পর থেকে সারা বিশ্বেই দাড়ি রাখার ফ্যাশন বেড়েছে।

মধ্যযুগে দাড়িওয়ালা মানুষের অনেক মূল্য ছিল। কারও দাড়িতে কেউ হাত দেওয়া ছিল মারাত্মক অপরাধ। মনে করা হতো, যে ব্যক্তির দাড়িতে হাত দেওয়া হয়েছে, তাকে চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছে। এই জন্য কঠোর শাস্তিও দেওয়া হতো।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মানুষের বয়স বাড়লে দাড়ি রাখায় সমর্থন বাড়ে। মানে ৮০ শতাংশের বেশি নারী কিংবা পুরুষের দাড়ির বিষয়ে কোনও আপত্তি থাকে না। কিন্তু অল্প বয়সের পুরুষদের মুখে দাড়ি রাখা নারীদের অপছন্দ।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন তার জীবনের শুরুর দিকে দাড়ি রাখতে পছন্দ করতেন না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট থাকা সময়ে তাকে একটি ছোট মেয়ে চিঠি লেখেন, 'আপনি যদি দাড়ি রাখেন, আপনাকে দেখতে সুন্দর লাগবে।' এরপর থেকেই লিঙ্কন দাড়ি রাখা শুরু করেন। সেই সঙ্গে ফুটে উঠে তার সুঠাম ব্যক্তিত্ব।

অনেকের ত্বকের অ্যালার্জি থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিরোধক হতে পারে দাড়ি। ডাক্তাররা বলেন, দাড়ি মানুষের ত্বককে প্রটেক্ট করে। দাড়ি রাখা মানুষদের গালের ত্বক কোমল হয়।

প্রাচীন মিশরেও দাড়ির জনপ্রিয়তা ছিল। এতটাই জনপ্রিয়তা ছিল যে ওই সময় মেয়েরাও দাড়ি রাখতেন। ধাতুর দাড়ির প্রচলন ছিল মিশরে। নারীরা সেই ধাতুর দাড়ি নিজেদের মুখে পড়তেন! তারা ছেলেদের মুখের দাড়িও খুব পছন্দ করতেন।


বাংলাদেশদর্পণ