নেত্রকোনা: বর্তমান বিশ্বে পরিবেশের একটি নতুন ইস্যু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ই-বর্জ্য। মূলত অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বাসাবাড়িতে ব্যবহারের পর বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য যখন অচল বা সচল অবস্থায় ফেলে দেয়া হয় তখনই তা  ই-বর্জ্যে পরিণত হয়। কখনো কখনো তা পূন:ব্যবহার উপযোগী করা হলেও অধিকাংশ সময়ে তা স্থায়ীভাবে বর্জ্যে পরিণত হয়। 

প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি, প্রতিদিন নতুন নতুন আপডেটেড ভার্সনের উদ্ভাবন, নতুন পণ্যের বহুমুখী কার্যকারিতা, ধারণ ক্ষমতার বৃদ্ধি, আকর্ষণীয় ডিজাইন, সঙ্গে মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং ফ্যাশনেবল ও আয়েসি জীবনের প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষণ ই-বর্জ্য সৃষ্টির কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। পুরনো ডিভাইসগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের মত টেকসই না হওয়া, মেরামত খরচ লাভজনক না হওয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বাজারজাতকরণ কৌশল ও ই-বর্জ্য সৃষ্টির অন্যতম কারণ।

পরিত্যক্ত ডিভাইসগুলি যত্রতত্র নিক্ষেপ এবং নিয়মকানুনহীন সংগ্রহ ও পুনঃচক্রায়ন কৌশলের কারণে দিন দিন তা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের প্রতি হুমকি হয়ে উঠছে । এসব কারণে বর্তমান বিশ্বে ই-বর্জ্য একটি অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে ই-বর্জ্যৈ এক হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ থাকে এবং নিত্যব্যবহার্য ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টেলিভিশন ও কম্পিউটার মনিটরে থাকা সিসা,পারদ, কপার এবং মাদারবোর্ডে থাকা বেরিলিয়াম, সেলফোন, রেফ্রিজারেটর ও এসি'তে ব্যবহৃত ক্ষতিকর পদার্থ সমূহ ক্যান্সার ও কিডনি নষ্ট হওয়া, থাইরয়েড হরমোন বিপর্যস্ত করা সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

এছাড়াও এগুলো ভূপৃষ্ঠস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির উৎস দূষণের মাধ্যমে সুপেয় পানির প্রাপ্যতাকে কঠিন করে তোলে। ।এই উপাদানগুলোর প্রভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হয় । বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃংখল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সার্বিকভাবে পরিবেশ পরিবর্তনে এগুলো ভূমিকা রাখে।

একটি সেল ফোনে প্রায় চল্লিশটি উপাদান থাকতে পারে । এরমধ্যে ২৩ শতাংশ ধাতব পদার্থ বাকি ৭৭ শতাংশ প্লাস্টিক ও সিরামিক । একটি হ্যান্ডসেটে ২৫০ মিলিগ্রাম সিলভার, ২৪ মিলিগ্রাম স্বর্ণ , ৯ মিলিগ্রাম প্যালাডিয়াম এবং ৯ গ্রাম তামা থাকে।

এছাড়া প্রতিটি মোবাইল ফোনের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে গড়ে ৩.৫ গ্রাম কোবাল্ট থাকে। এগুলো ছাড়াও সিসা, জিংক ও আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর উপাদান থাকে । তাই ব্যাটারিসহ ফোনসেট উন্মুক্ত ভূমিতে ফেললে তা মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে । সেলফোনে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম ছয়হাজার লিটার পর্যন্ত পানি দূষণ করতে পারে।

পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব ই বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার জন্য নেই কোন সুনির্দিষ্ট  নীতিমালা। ফলে যত্রতত্র এসব বর্জ্য ফেলে রাখার কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ঝুঁকছে।জেলা শহরে প্রায় অর্ধশতাধিক মোবাইল ও ইলেকট্রনিক দ্রব্য মেরামতের দোকান ও ভাঙাড়ি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।এসব দোকানি ও প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা হলে অনেকাংশেই কমে আসবে যত্রতত্র এসব বর্জ্য ফেলে দেয়ার প্রবণতা। তাই প্রশাসনের উচিত এখনই এসব বিষয় নজরে এনে সঠিক ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেয়া।

 

নয়ন বর্মন, নেত্রকোনা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দর্পণ