কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির পাড়ে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার মামলায় ইকবাল হোসেনসহ চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তৃতীয় দফায় তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর আদালতের বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। 

আজ সিআইডির  কুমিল্লা ও নোয়াখালী বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

মামলার অপর তিন আসামি হলেন রেজাউল ইসলাম ওরফে ইকরাম, মাজারের হুজুর মো. হুমায়ুন কবির সানাউল্লাহ ও খাদেম আশিকুর রহমান মোহাম্মদ ফয়সল।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা দুইটায় ইকবাল হোসেনসহ চার আসামিকে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সিআইডি আদালতের বিচারকের কাছে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনামুল হক পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। বিকেল চারটায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কান্তি নাথ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। পরে তাঁদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২১ অক্টোবর কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে নানুয়া দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার অভিযোগে ইকবাল হোসেনকে আটক করে কক্সবাজার পুলিশ। ২২ অক্টোবর দুপুরে ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে আনা হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর দুপুর ১২টায় ইকবালসহ চার আসামিকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করেন। তত্কালীন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মফিজুল ইসলাম খান তাঁদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এই সময় বিচারক সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাঁদের পুলিশ আদালত কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

২৪ অক্টোবর এই মামলা সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সিআইডির পাঁচ সদস্যের একটি দল ওই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শুক্রবার প্রথম দফা রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে অধিকতর তদন্তের জন্য তাঁদের কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আমলি আদালতে নেওয়া হয়। তখন আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারহানা সুলতানার কাছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনামুল হক সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সিআইডি সূত্রে আরও জানা যায়, এ মামলার আসামি রেজাউল ইসলাম ওরফে ইকরাম কোরআন রাখার পর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার বিষয়টি জানান। এ ছাড়া ঘটনার পর উত্তেজিত জনতার বিক্ষোভেও অংশ নেন। হুমায়ুন ও ফয়সল কুমিল্লা নগরের দারোগা বাড়ি মসজিদ ও মাজারের হুজুর ও খাদেম। ওই মাজার থেকেই কোরআন শরিফ নিয়ে পূজামণ্ডপে রাখেন ইকবাল।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ‘পবিত্র কোরআন অবমাননার মামলায় ইকবালসহ চার আসামির দেওয়া তথ্য যাচাই–বাছাই করতে সময় লাগবে। এগুলো আমরা সন্নিবেশ করব। এখন তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে রেখেছি। পরে কারাগার থেকে তাঁদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

গত ১৩ অক্টোবর সকালে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির পাড়ে শারদীয় দুর্গাপূজার পূজামণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধার করা হয়। এরপর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার নগরের চারটি মন্দির, সাতটি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়। এ ছাড়া জেলার সদর দক্ষিণ, দেবীদ্বার ও দাউদকান্দিতে প্রতিমা ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এসব ঘটনায় ১১টি মামলা হয়। মামলায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জামায়াতের ৩ কাউন্সিলর, বিএনপির কয়েক কর্মীসহ ৯২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি ১ হাজার ১০ জন। এ ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

 

প্রতিমা ভাঙচুরের মামলায় ১৭ আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

কুমিল্লা নগরের ঠাকুরপাড়া রক্ষাময়ী কালীমন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুরোহিত ও দর্শনার্থীদের মারধর জখম এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১৭ জন আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কুমিল্লার আদালত। বুধবার দুপুরে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম চন্দন কান্তি নাথ ওই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা নগরের ঠাকুরপাড়া রক্ষাময়ী কালীমন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, আগুন লাগানো, মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মো. আলমগীর বাদী হয়ে ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে এ পর্যন্ত এই মামলার ২৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে তিনজন আসামির আগেই দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

বুধবার দুপুরে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অপর ১৮ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির আদালতের বিচারকের কাছে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানান। আদালতের বিচারক ১৭ আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার রিমান্ড নামঞ্জুর করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।  

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। আদালতের রিমান্ডের আদেশ পাওয়ার পর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হবে। এই আসামিরা বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

গত ১৩ অক্টোবর সকালে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির পাড় অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা নিয়ে কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজিত জনতা হামলা চালায়। এ সময় তাঁরা অন্তত চারটি মন্দির ও সাতটি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করে। এসব ঘটনায় ১১টি মামলা হয়।

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ