ঢাকা: এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। বৃহস্পতিবার সারা দেশে বাস-ট্রাক ধর্মঘটের ডাক দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রাক-বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি।

প্রথমে বিভিন্ন জেলায় খণ্ড খণ্ডভাবে গণপরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিলেও পরে সেই ডাকে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় পরিবহন মালিক সমিতি।

এতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর তাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীসহ সারাদেশের সাধারণ যাত্রীরা। রাজধানীর প্রতিটি বাসস্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষমায় থাকা যাত্রীদের ভিড়।

তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ৷ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা হবে। সাত কলেজের নিয়ন্ত্রক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবহন ধর্মঘট হলেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা গণপরিবহন না পেয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।

রাজধানীর বাসাবো বাসস্টপেজে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন পরীক্ষার্থী। তারা জানান, হঠাৎ গণপরিবহন বন্ধ করায় বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। প্রায় ৪০মিনিট ধরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু কোন গাড়ি পাচ্ছি না। রিক্সা ও সিএনজি কয়েকগুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এখন বাধ্য হয়ে আমাদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হবে। তারা বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর আগে সরকারের উচিত ছিলো বাস ভাড়ার বিষয়টি সমাধান করা কিন্তু তা না করে হঠাৎ তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের।

রাজধানির খিলগাঁও বাসস্টপেজে পরিবার নিয়ে মিরপুর ২ যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন রবিউল নামের এক যাত্রী। তিনি জানান প্রায় ৩০ মিনিট যাবত কোন গাড়ির দেখা পাচ্ছি না। ধর্মঘট অমান্য করে যে কয়েকটি গাড়ি চলছে তাতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। তিনি বলেন , খিলগাঁও থেকে মিরপুর২ পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৪০০টাকা। এখন বাধ্য হয়ে আমাকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে হবে।

এমন অনেক যাত্রী দেখা গেছে রাজধানীর বাসস্টপেজগুলোতে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে যাত্রী সংখ্যাও। রাজধানীর সড়কগুলোর অধিকাংশই ছিলো রিক্সা ও সিএনজির দখলে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, তেলের দামের সঙ্গে বাস ভাড়া বৃদ্ধি না করলে মালিকরা গাড়ি চালাবে না। কারণ এতে মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কঠোর ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই (ধর্মঘট প্রত্যাহারের) বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব আসেনি। তবে রোববার মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে। সরকার আমাদের দাবি দাওয়া মেনে না নেয়া পর্যন্ত চলবে ধর্মঘট। মালিকদের সঙ্গে কোনও প্রকার কথা না বলে এভাবে হঠাৎ করে তেলের মূল্য বৃদ্ধি অযৌক্তিক। এই মূল্য বৃদ্ধির ফলে শুধু আমরা পরিবহন মালিকরা নয়, সারা দেশের জনগনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও প্রস্তাব আসেনি।

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ