একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোরের সংগ্রাম শুরু হয় ৩রা মার্চ গৃহবধু চারুবালা করের শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে। আর শেষ হয় ৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহীনিকে যশোর থেকে বিতাড়ন করে। আজ সেই সংগ্রাম শুরুর দিন ৩রা মার্চ। স্বাধীনতা যুদ্ধে যশোরের প্রথম শহীদ চারুবালা করের প্রয়াণ দিবস।


১৯৭১ সালের মার্চ মাস। সারা দেশের মত স্বাধীনতার স্বাদ নিতে উত্তাল যশোরের মানুষ। ৩রা মার্চ সকালেই মুক্তিকামী জনতারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মিছিল বের করে যশোর শহরে। হাজারো মানুষের এই মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি রেলরোডে পৌঁছালে খাদ্য গুদামের সামনে পাক বাহীনির অবস্থান দেখে বিক্ষুব্ধ জনতা সার্কিট হাউজ অভিমুখে রওনা হয়। সার্কিট হাউজেও পাক আর্মিদের দেখে সেখানে আক্রমনের প্রস্তুতি নেয় বিক্ষুব্ধ বাঙালি। তখন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ মশিউর রহমান সবাইকে শান্ত করে নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে অবস্থান নেয়। মধ্য দুপুরের দিকে খবর আসে পাক বাহিনী টেলিফোন ভবন দখল নিতে যাচ্ছে। সাথে সাথে সংগ্রামী জনতা তা প্রতিহত করতে অগ্রশর হয়। বিক্ষোভকারী দল টেলিফোন ভবনের সামনে পৌঁছালে ভবনের ছাদ থেকে পাক বাহীনি অতর্কিতভাবে গুলি বর্ষন শুরু করে। টেলিফোন ভবনের পাশেই স্বামীর সাথে বসবাস করত নিঃসন্তান চারুবালা কর। গুলি বর্ষনের সময় চারুবালা কর উঠানে বসে ছিল। পাক বাহীনির ছোড়া একটি বুলেট বিদ্ধ হয় তার মাথায়। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে চারুবালা কর।


চারুবালার লাশ নিয়ে রাখা হয় যশোর সদর হাসপাতাল মর্গে। লাশ হস্তান্তরে বাঁধ সাধে পাক আর্মি। তখন মশিউর রহমান পাক আর্মিদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে বলেন আমার মায়ের লাশ আমি নিয়ে যাব। জনতার বিক্ষোভের মুখে লাশ হস্তান্তরে বাধ্য হয় পাক বাহিনী। ২৫০০০ মুক্তিকামী মানুষ চারুবালার মৃতদেহ নিয়ে রওনা হয় নীলগঞ্জ শ্মশানে তার শেষকৃত্য করার জন্য। 


যশোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রথম শহীদ চারুবালা কর আজও অজানা এক ইতিহাস। তবে চারুবালার মৃত্যু ছিল যশোরের স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা।