পর্ন জগত ছেড়ে দিয়েছেন মিয়া খলিফা। কিন্তু সেই লজ্জা ও সংকোচ এখনো তাকে তাড়া করে। তার মনে হয়, মানুষ তার পোশাকের ভিতর দিয়েও তাকে দেখতে পাচ্ছে। সম্প্রতি বিবিসিকে এমনটাই জানালেন তিনি।

১৯৯৩ সালে লেবাননে জন্ম নেওয়া মিয়া খলিফা ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। জন্মসূত্রে মুসলিম হলেও পরবর্তীতে খ্রিস্টান ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৪ সালের শেষদিকে মাত্র তিন মাসের জন্য তিনি পর্ন অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেন। তার এই সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারই তাকে বিশ্বজুড়ে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল। জনপ্রিয়তার বিচারে বিশ্বের সেরা দশ পর্ন অভিনেত্রীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। আর পর্নহাব ওয়েবসাইটে বছরের শীর্ষ জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়েছিলেন মিয়া খলিফা।  

অনেকের ধারণা পর্ন তারকারা হয়তো প্রচুর টাকা আয় করেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য একেবারেই ভিন্ন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মিয়া বলেন, ‘মানুষ মনে করে আমি পর্ন অভিনয় করে লাখ লাখ ডলার আয় করেছি। এটা একেবারেই অসত্য। আমি এই শিল্প থেকে সর্বসাকুল্যে ১২ হাজার ডলার অর্জন করেছিলাম। এরপর আর এক পয়সারও মুখ দেখিনি। পর্ন শিল্প ছেড়ে দেওয়ার পর একটি সাধারণ চাকরি খুঁজে পেতেও আমাকে বেগ পোহাতে হয়েছে।’

২৭ আগস্ট বিবিসি’র হার্ডটক-এ উপস্থিত হয়ে মিয়া জানালেন, পুরো শৈশবকালেই তিনি তার ওজন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাকে একদমই আকর্ষণীয় লাগতো না। কোন পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতেন না তখন। স্নাতক পড়াশুনার সময়েই তার ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে। মডেলিং শুরু করেন। পড়াশুনা শেষ না হতেই তিনি ওজন কমিয়ে একদম ফিট হয়ে যান। আর পর্ন জগতে অভিনয় নিতান্তই তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ব্যাপার ছিল বলে মনে করেন তিনি।

তবে মিয়া যেমনটা চেয়েছিলেন, পরিস্থিতি ঠিক তেমন অনুকূলে গেল না। পর্ন সাইটে তার একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র হিজাব পরে তিনি পর্ন দৃশ্যে অভিনয় করায় তার জন্মভূমি লেবানন ও মধ্য-প্রাচ্য জুড়ে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। এমনকি ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদেরও দৃষ্টি পড়ে তার ওপর।

মিয়া খলিফা তার বন্ধু মেগান অ্যাবটকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হিজাব পরে অভিনয়ের পরই আমার জীবনে মোড় আসে। মিশর, আফগানিস্তানসহ কিছু মুসলিম দেশ খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এটা সত্যিই তাদের মর্মাহত করেছিল। আর আমি তো ক্যাথলিক। তাই আমার কাছে এটা খারাপ কিছু ছিল না। যখন পর্ন প্রতিষ্ঠান আমাকে এই দৃশ্যে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, আমি আক্ষরিকভাবেই বলেছিলাম, ‘তোমরা তো আমাকে মেরে ফেলতে যাচ্ছ।’ এরপর সত্যিই আইএসআইএস জঙ্গীরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। শুধু আমেরিকা নয়, সারা বিশ্বে এটা খবর হয়ে যায়। আমি আইসিসের হুমকিতে ভীত ছিলাম না। তবে এটা আমাকে ঝাঁকুনি দিয়েছিল। এর চেয়ে বড় কথা হলো, আমি খুব লজ্জার মধ্যে বাস করতাম।

এই লজ্জার কথা মিয়া খলিফা অকপটে স্বীকার করেছেন বিবিসির হার্ডটকে। তিনি জানান কীভাবে তার সংক্ষিপ্ত পর্নগ্রাফিক ক্যারিয়ার এখনো তার প্রাত্যহিক জীবন ও গোপনীয়তার ওপর প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, ‘পর্ন জগত ছেড়ে দেওয়ার পর এখন সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপ কাজ করে যখন আমি মানুষের মাঝে যাই। লোকজন যেভাবে তাকায়, আমার মনে হয় তারা আমার পোশাকের মধ্য দিয়ে আমাকে দেখে ফেলছে। আর এটা আমাকে প্রচণ্ড লজ্জা দেয়। এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমি যা করেছি, তাতে আমার গোপনীয়তার সব অধিকার হারিয়ে ফেলেছি।’