ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ফের রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী দিল্লি। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সিএএ-বিরোধীদের হামলায় দিল্লি পুলিশের এক হেড কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। এছাড়া বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে অন্তত ৬ জন। এদিন বিক্ষোভকারীরা পেট্রোলপাম্প ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, যানবাহন ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেওয়াসহ প্রতিপক্ষের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লি পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসময় মৃত্যু হয় রতনলাল নামের এক হেড কনস্টেবলের।

প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পিস্তল হাতে এক বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদ শাহরুখ নামের ওই যুবক পিস্তল উঁচিয়ে পুলিশকে হুমকি দেয়। টাইমইস অব ইন্ডিয়া জানায়, পরবর্তীতে মোহাম্মদ শাহরুখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তবে গুলিবিদ্ধ হয়েই ওই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত দশজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠা উত্তর-পূর্ব দিল্লির ১০ জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।

এনডিটিভি জানায়, সোমবার সকালে ট্রাম্পের দিল্লি সফরের কয়েক ঘন্টা আগেই উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, মৌজপুর ও জাফরাবাদে সিএএ-বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ২৪ ঘটনায় এ নিয়ে দ্বিতীয় বার এসব জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। 

এর আগে রবিবারেও সিএএ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে দিল্লির জাফরাবাদ এবং উত্তর প্রদেশে আলিগড়ে। সোমবার দুপুরেও  জাফরাবাদের গোকুলপুরি, ভজনপুরা এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালে সিএএ-র সমর্থকরা সেখানে হাজির হয়। তাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা হামলা করে সিএএ সমর্থকদের ওপর। রাস্তাতেই দু’পক্ষের সঙ্ঘর্ষ বেধে যায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি করতে থাকে। এ সময় বেশ কিছু গাড়ি ও দোকানে আগুন দেয় সিএএ বিরোধীরা। একটি পেট্রোল পাম্পেও আগুন ধরায় তারা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দিল্লি পুলিশের একটি বাহিনী। লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু কর বিক্ষোভকারীরা। এসময় মাথায় গুরুতর আঘাত পান রতনলাল নামের এক হেড কনস্টেবল। তবে এক ভিডিও ফুটেজে ওই কনস্টেবলের দিকে পিস্তল হাতে এগিয়ে আসতে দেখা যায় এক বিক্ষোভকারীকে। গুরুতর আহত ওই কনস্টেবলকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।  প্রাথমিকভাবে বিক্ষোভকারীদের গুলিতে তার মৃত্যুর কথা জানা গেলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। ইটের আঘাতে আরও অন্তত দশজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।

অন্যদিকে, রাজধানীর উত্তর-পূর্বের সংঘর্ষ বিক্ষুব্ধ এলাকাগুলোতে ১৪৪ ধারা জারির খবর পাওয়া গেছে। এ ধারায় উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরেও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

দিল্লির উপরাজ্যপাল অনিল বায়জল বলেন, তিনি ‘আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন’। তার কথায়, ‘পরিস্থিতির দিকে নিবিড় নজর রাখা হচ্ছে। আমি সবাইকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।’

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন। 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দিল্লির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে ব্যাপক সংখ্যক কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ (সিআরপিএফ) নামানো হয়েছে।