সাইনোসাইটিসের (সাইনাসের সমস্যা) সমস্যা অনেকেরই আছে। সারাক্ষণ মাথায় অস্বস্তি, নাকের মাঝে ভারী লাগা, কপালে অস্বস্তিসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে সাইনোসাইটিস।

মাথার খুলিতে মুখমন্ডলীয় অংশে নাসাগহ্বরের দুপাশে অবস্থিত বায়ুর্পূণ চারজোড়া বিশেষ গহ্বরকে সাইনাস বলে। এসব সাইনাস যদি বাতাসের বদলে তরলে র্পূণ থাকে এবং সে তরল যদি জীবাণুতে সংক্রমিত হয় তখন সাইনাসের মিউকাস ঝিল্লিতে ব্যাথা হয়। বলা যেতে পারে, ম্যাক্সিলারি সাইনাসের ব্যথা ও ম্যাক্সিলারি সাইনাসের অবস্থানের ওপর, অর্থাৎ নাকের পাশে, গাল, দাঁত কিংবা মুখ বা মুখমণ্ডলের আশপাশেও ব্যথা হয়ে থাকে। এ ধরনের মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে মাথার মধ্যে হালকা শূন্যতা অনুভূত হয়ে।
 

সাইনোসাইটিস কেন হয়?

এটা সব বয়সের মানুষেরই হতে পারে । তবে তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি হয়।বিভিন্ন কারণে সাইনোসাইটিস হতে পারে যেমন: ঠাণ্ডাজনিত কারণে, অ্যালার্জিজনিত কারণে,নাকে পলিপ সৃষ্টির কারণে, নাকের হাড় বাঁকা ও নাকের মাংস বৃদ্ধির কারণে। এছাড়াও সাধারণত ঘরের পোকামাকড়,ধুলাবালি,পেস্ট,তেলাপোকাজনিত বায়ুবিদূষণ যেসব অ্যালার্জেন ধারণ করে তাতেও এ রোগের সংক্রমণ হয়। 

সাইনোসাইটিসের লক্ষণ:
১.নাক থেকে ঘন তরল বের হতে থাকে।
২.তীব্র দীর্ঘ ও বিরক্তিকর মাথা  ব্যাথা লেগেই থাকে যা সাইনাসের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে।
৩.মাথা নড়াচড়া করলে ,হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যাথার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়।
৪.জ্বর জ্বর ভাব থাখে ও অল্পেই ক্লান্ত লাগে ।
৫.নাক বন্ধ থাকে, নিশ্বাসের সময় নাক দিয়ে বাজে গন্ধ বের হয়।

সাইনোসাইটিসের প্রতিকার:

কম জলীয়বাষ্পযুক্ত স্থানে সাইনোসাইটিসের সমস্যা বেড়ে যায় এবং বেশি কষ্ট হয়। আবার বেশি জলীয় বাষ্প যুক্ত যায়গাতেও শ্লেষ্মার প্রকোপ বাড়ে। তাই চেষ্টা করুন এমন যায়গায় থাকতে যেখানে জলীয় বাষ্প বা বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিক। স্যাঁতসেঁতে কিংবা অতিরিক্ত শুষ্ক আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।

১. সাইনোসাইটিস সমস্যায় গরম পানির ভাপ বা সেঁক নেওয়া একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। গরম পানির ভাপ নিলে নাসিকা পথ ভেজা থাকবে এবং সহজেই শ্লেষ্মা বের হয়ে আসবে। তাই গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে নিয়ে দিনে দু’ বার করে ভাপ নিন।

২. সাইনোসাইটিসের কারণে যখন নাকে, মাথায় অথবা কপালে অস্বস্তি লাগবে তখন গরম পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে ভাল করে নিংড়ে নিন। এরপর এই তোয়ালেটা মুখের উপর দিয়ে শুয়ে থাকুন কিছুক্ষণ। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষনিকভাবে বেশ আরাম পাওয়া যায়।

৩.যখন বাইরে বের হবেন তখন তো আর গরম পানির ভাপ বা সেঁক নেওয়া সম্ভব না। তাই বাড়ির বাইরে যতক্ষণ থাকবেন, চেষ্টা করবেন কিছুক্ষণ পর পর চিনি ছাড়া গরম চা, কফি বা স্যুপ খাওয়ার। গরম তরল খাবারগুলো খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে এবং সহজে পরিষ্কার হয়ে যায়।

৪. সিগারেটের ধোয়া, ধুলোবালি, হেয়ার স্প্রে, বডি স্প্রে ইত্যাদি জিনিসগুলো থেকে দূরে থাকুন। এ ধরণের জিনিসগুলো নাসিকা পথে ঢুকে যায় এবং সাইনোসাইটিস সমস্যা বাড়ায়। রাস্তায় বের হলে নাকে কাপড় দিয়ে রাখুন বা মাস্ক পড়ে নিন। তাহলে ধুলোর সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে এবং সাইনোসাইটিসের সমস্যার আরামও পাওয়া যাবে।

প্রথম অবস্থায় এ রোগ ধরা বেশ কষ্টকর। সাইনোসাইটিস নির্ণয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিভিন্ন পদ্ধতির সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।যেমন-সিটিস্ক্যান, নেসাল এন্ডোসকপি, নাকের মাংসের বায়োপসি, সানুসকপি, সুইয়েটকোরাইড টেস্ট।সাইনোসাইটিসের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।দাঁতের ক্ষয় এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যথা থাকলে ব্যথানাশক ওষুধ (প্যারাসিটামল) খাওয়া যেতে পারে। ওষুধে ভালো না হলে, সাইনাস ওয়াশ করতে হবে। অনেকের ভুল ধারণা আছে, একবার সাইনাস ওয়াশ করলে বারবার করতে হয়, ধারণাটি ঠিক নয়। ব্যাকটেরিয়াজনিত সাইনোসাইটিস ওয়াশ করে উপযুক্ত মাত্রা এবং নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়।