ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে একটি অংশ যখন মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ করছে তখন নরেন্দ্র মোদীর সফরের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরলো ৭১'র ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

আসছে ১৭ই মার্চ নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ প্রতিহত করার জন্য সরকার এবং নাগরিক সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক শাহরিয়ার কবির।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের পরে মি: কবির এ কথা বলেন।

অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিপক্ষে বাংলাদেশে সবার আগে মাঠে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্ব একদল শিক্ষার্থী।

এরপর বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠনও বড় ধরণের বিক্ষোভ করেছে।

মি: নুর বলেন, নরেন্দ্র মোদী যেদিনই বাংলাদেশে আসবেন সেদিনই তারা বিক্ষোভ করবেন।

"প্রয়োজনে যদি এয়ারপোর্ট অবরোধ করা লাগে কিংবা ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এয়ারপোর্ট অভিমুখে লংমার্চ করা লাগে, যদি ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘেরাও করা লাগে - আমরা সে ধরণের কর্মসূচি নেব। মোদীর আগমনকে বাংলাদেশে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো," বলছিলেন মি: নূর।

তবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির মনে করেন, যারা এ ধরণের বিক্ষোভ করছে তারা আসলে এর আড়ালে 'ভারত বিরোধিতা এবং পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিতে' সক্রিয় হবার চেষ্টা করছে।

বিক্ষোভকারীরা দাবি তুলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাতে ঢাকায় আসতে না পারেন।

বিক্ষোভকারীরা দাবি তুলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাতে ঢাকায় আসতে না পারেন।

মি: কবির বলেন, "১৭ই মার্চ এ ধরণের কাজ করতে দেয়ার অর্থ হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা, বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। এটা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। প্রতিবাদকে আমি আপত্তি করছিনা। কিন্তু ১৭ই মার্চ কেন?"

নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশে আসছেন - একথা উল্লেখ করে মি: কবির বলেন, এর সাথে তার দল কিংবা ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর কোন সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, "তারা প্রতিবাদ করতে চাইলে অন্য কোন দিন করুক। কিন্তু যদি ১৭ই মার্চ এটা যদি করা হয় তাহলে এটা মুজিববর্ষকে এবং বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হবে। যারা মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন, তাদেরকে আমাদের স্বাগত জানাতে হবে। আপনি এখানে ভারতকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলবেন, অবাঞ্ছিত বলবেন - তার মানে কী? ভারত কি পাকিস্তান নাকি?"

শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্যের বিরোধিতা করে নুরুল হক নুর বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতির ময়দানে কাজ করছে।

"বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। তাঁর মতো একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের জন্মদিনে মোদীর মতো একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি আসতে পারেনা। আমরা ভারতের বিরোধিতা নয়, মোদীর আগমনের বিরোধিতা করছি।"

মি: নূর পাল্টা দাবি করেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি অংশ এবং তারা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই কাজ করে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মনে করে, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটির সাথে মুজিববর্ষের কোন সম্পর্ক নেই।

ভারতে শুধুই মুসলিমদের উপর হামলা হচ্ছে, এমন কথা মানতে নারাজ শাহরিয়ার কবির।

তিনি বলেন, "ভারতে সহিংসতায় মুসলমানদের উপর যেমন হামলা হচ্ছে, তেমনি হিন্দুদের উপরও হামলা হচ্ছে। হিন্দু-মুসলমান সবাই মারা গেছে। আসামে এনআরসি'র কারণে নাগরিকত্ব নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেখানে মুসলমানের চেয়ে হিন্দু সংখ্যা বেশি।"

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা এসব বিরোধিতাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, এবং মি. মোদী ঢাকায় এলে তাকে উপযুক্ত সম্মানই দেখানো হবে।