করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত তিন জন রোগী পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আক্রান্তরা হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে আছেন আরও দুই জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা। একইসঙ্গে তারা বলছেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জনগণের অংশগ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যদি সচেতন না হয় তাহলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। যেহেতু এখনও করোনা ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক তৈরি হয়নি, তাই আপাতত এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা।

মূলত কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাশি শিষ্টাচারকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ৩ করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কোভিড-১৯-এর কোনও চিকিৎসা নেই। তবে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে অন্তত বিশ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। অপরিষ্কার হাত দিয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা যাবে না। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কারও যদি হাঁচি-কাশি থাকে, তাহলে হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে নিতে হবে। নাক-মুখ ঢাকার জন্য টিস্যু পেপার অথবা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। যদি টিস্যু ব্যবহার করা হয় তাহলে সেই টিস্যু ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলতে হবে, যেন ওই টিস্যু থেকে জীবাণু না ছড়াতে পারে। যদি কাপড় ব্যবহার করা হয় তাহলে সে কাপড় নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। যদি টিস্যু বা কাপড় না থাকে তাহলে কনুই দিয়ে নাক ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। যেখানে সেখানে কফ-থুথু ফেলা যাবে না। কারও সঙ্গে করমর্দন এবং কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

কোভিড-১৯ এমন একটি রোগ, যেখানে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মানুষ মৃদু সংক্রমণে ভোগেন উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা বলেন, আমাদের যে তিন জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন তারাও কিন্তু মৃদু সংক্রমণের। তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যেত। কারণ, তাদের এখন খুব বেশি চিকিৎসা প্রয়োজন হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও তাদের হাসপাতালে রাখা হয়েছে যদি তাদের ইনফেকশনের চেইনটা আমরা ভেঙে দিতে পারি। তাদের থেকে ভাইরাসটি যেন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

তিনি বলেন, কেউ যদি আক্রান্ত দেশ থেকে এসে থাকেন এবং তার মধ্যে যদি এসব লক্ষণ-উপসর্গ থাকে তাহলে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি না করে সরাসরি আইইডিসিআরে হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন। যদি লক্ষণ-উপসর্গ তীব্র হয়, যেমন শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য জটিলতা থাকে, তাহলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

যারা আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করবেন, প্রতিষ্ঠান টিম পাঠিয়ে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবে, অন্য কোথাও না যেতে অনুরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। তিনি বলেন, আপনারা কেবল আইইডিসিআরে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেই এ সেবা পেয়ে যাবেন। যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন কিন্তু তাদের লক্ষণ-উপসর্গ নেই, তারা অবশ্যই বাড়িতে অবস্থান করবেন। বাড়িতে অবস্থান করার এই ছোট কাজটি পরিবারের অন্যদের যেমন রক্ষা করবে, তেমনি সারাদেশে ছড়িয়ে না পড়তেও সহযোগিতা করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘করোনার কোনও ভ্যাকসিন নেই, ওষুধ নেই। তাই একে প্রতিরোধ করতে হবে, এছাড়া কোনও উপায় নেই। আর প্রতিরোধ করতে হলে যেখানে সেখানে থুথু ফেলা যাবে না। সর্দি-কাশি হলে রুমাল ও টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। আর অবশ্যই সাবান দিয়ে রুমাল ধুয়ে ফেলতে হবে। টিস্যু ব্যবহার করলে, ব্যবহারের পর তা ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলতে হবে, যেন টিস্যু থেকে জীবাণু না ছড়াতে পারে।’

আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: সারাদেশের হাসপাতালে প্রস্তুত হচ্ছে ১০ হাজার শয্যা