সিঁথি ভরা সিঁদুর পরে যেদিন পার্লামেন্টে শপথ নিতে গিয়েছিলেন হিন্দু নবপরিণীতা বেশে, সেদিনই তৃণমূল সাংসদ নুসরাত জাহানের উপর ফতোয়া জারি করেছিল মৌলবাদীরা। স্বামী নিখিলের সঙ্গে ইসকনের রথের দঁড়ি টেনেও জোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।

এরপর থেকে অষ্টমীর অঞ্জলি হোক কিংবা কালীমন্দিরে পুজো দেওয়া, বারবার উলেমাদের রোষানলে পড়তে হয়েছে অভিনেত্রীকে। তবে কটাক্ষের শিকার হলে তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরাত অবশ্য কোনও দিনই সেসবে কর্ণপাত করেননি।

বরাবরই ছক ভেঙে এগিয়ে এসেছেন অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য নুসরাত। তিনি বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের কথা। মুসলমান ঘরের মেয়ে হয়েও কেন হিন্দু প্রথা পালন করছেন? একাধিকবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েও অবিচল থেকেছেন নিজের বিশ্বাসে। তার ভাষায়, ‘সবার উপরে মানবতার স্থান’। আরও একবার সেসব ফতোয়ার তোয়াক্কা না করে পুজো দিলেন তারাপীঠে।

বুধবার রামপুরহাটে এক শপিং মলের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। প্রচণ্ড ভীড় এবং জমায়েতের জেরে সেখানে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হয়নি অভিনেত্রীর। তবে ফেরার পথে তারাপীঠের জাগ্রত মন্দিরে মায়ের দর্শন করতেও ভুললেন না। স্বামী নিখিল জৈনকে সঙ্গে নিয়েই ঢুকে পড়লেন মন্দিরের। নিষ্ঠাভরে পুজো দিলেন। বিশালকার জবা ফুলের মাল্যদান করলেন মায়ের মূর্তিতে। নুসরাতের পরনে ছিল হলুদ শাড়ি। কপালে সিঁদুর।

সাংসদ অভিনেত্রীর তারাপীঠে পুজো দিতে যাওয়ার খবর অবশ্য চাউর হতেই মন্দির চত্বরে ভিড় জমান অনুরাগীরা। যদিও নুসরাতের তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দেওয়া নিয়ে এখনও কোনও রকম কুমন্তব্য কোথা থেকেই পাওয়া যায়নি। তবে, সমালোচনার শিকার হলে সাংসদ যে তা ভালভাবেই সামলে নেবেন, তা বলাই যায় ।

এর আগে সাংসদে দাঁড়িয়ে হিন্দু নববধূর বেশে শপথ নেওয়ার পর কটাক্ষের শিকার হতেই নুসরাত বলেছিলেন, “একজন হিন্দুকে বিয়ে করা মানে এই নয় যে আমি আমার মুসলিম সত্ত্বা বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি। মুসলিম পরিবারে জন্মেছি। আর সেই আভিজাত্যই বজায় রেখে যাব। কিন্তু অন্য ধর্মকে সম্মান করাতে তো দোষের কিছু নেই! কেন ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা?” প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি যে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, তারাপীঠে পুজো দিয়ে আবারও প্রমাণ করলেন নুসরাত জাহান জৈন।