ব্যস্ত জীবনযাপনের অন্যতম সাইড এফেক্ট স্ট্রেস। এটা থেকে শুরু হয় নানান সমস্যা যেমন- খিটখিটে মেজাজ, মন খারাপ, উদ্বেগ ইত্যাদি। আর এই মহামারিতে আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। তাই এইসময় মনের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের, মানসিক সুস্থতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ করতে কাজ করে।

স্ট্রেসের মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় হলো ব্রিদিং এক্সারসাইজ। তাছাড়া কাজের চাপে যাঁরা আলাদা করে শরীরচর্চা করার সময় পান না, তাঁদের জন্যও ব্রিদিং এক্সারসাইজ পারফেক্ট অপশন। নিয়মিত অভ্যাসে আপনি হয়ে উঠবেন ফিট এবং অ্যাক্টিভ। 

যাঁরা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন, তাঁরাও প্রতিদিন কিছুটা সময় ব্রিদিং এক্সারসাইজের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারেন। আর অনেক ব্রিদিং এক্সারসাইজ আপনি দিনের যেকোনও সময়ে, বা যেকোনও জায়গায় করতে পারেন।

ব্রিদিং এক্সারসাইজের সুফল

নিয়মিত ব্রিদিং এক্সারসাইজের অভ্যাস থাকলে শরীর অনেকটাই টক্সিন মুক্ত থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ টক্সিনই ব্রিদিং এক্সারসাইজের সময় বেরিয়ে যায়। আর টক্সিন মুক্ত শরীর মানেই আপনি ফিট থাকার পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেন।

আধুনিক জীবনযাপন আর স্ট্রেস হাত ধরাধরি করে চলে। স্ট্রেসের মোকাবিলা করার জন্য ব্রিদিং এক্সারসাইজের কোনও বিকল্প নেই। নিয়মিত অভ্যাসে স্নায়ু, ও পেশিগুলি শান্ত হয়ে আসে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিই আপনি ঠাণ্ডা মাথায় সামলাতে পারবেন। শরীরকে অনেকটা রিল্যাক্সডও রাখে।

নিয়মিত ব্রিদিং এক্সারসাইজ করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয়। ফলে শরীরকে ব্যথা বেদনা তেমন কাবু করতে পারে না। শরীর অনেক ফ্লেক্সিবলও থাকে। এছাড়া হৃত্‍‌পিণ্ড, লিভার, প্যানক্রিয়াসের মতো শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিও ব্রিদিং এক্সারসাইজের ফলে, আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এই সমস্ত কারণেই সন্তানসম্ভবাদের জন্যও ব্রেদিং এক্সারসাইজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তাঁরা অনেকটাই স্ট্রেস ফ্রি থাকবেন তো বটেই, শরীরও অক্সিজেনে ভরপুর থাকবে, যা এই সময় খুবই দরকার। ব্রিদিং এক্সারসাইজ অনেক ধরনেরই হয়।

এমনকি যোগ ব্যায়ামেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্রিদিং এক্সারসাইজ, যাকে আমরা প্রাণায়াম বলি। কপালভাতি, অনুলোম বিলোমের কথা তো আমরা সকলেই জানি। তবে সঠিকভাবে ব্রিদিং এক্সারসাইজ না করলে কিন্তু এর উপকার পাওয়া মুশকিল। প্রত্যেকটি ব্রিদিং এক্সারসাইজের কিছু আলাদা পদ্ধতি আছে। তাই সেগুলি ঠিকমতো না শিখে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা একেবারেই উচিত্‍ নয়। কিছু সহজ ব্রিদিং এক্সারসাইজ আপনি বাড়িতেও চেষ্টা করতে পারেন।

সুখাসনে শিরদাঁড়া টানটান করে বসুন। এবার ধীরে ধীরে পাঁচ গুণতে গুণতে নিঃশ্বাস নিন। নিঃশ্বাস ছাড়ার সময়ও ধীরে ধীরে পাঁচ গুণতে গুণতে ছাড়ুন। খেয়াল রাখুন যতটা সময় নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় লেগেছিলো, ততটা সময়ই যেন নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় লাগে। এইভাবে ১০-১৫ বার এই ব্যায়ামটি রিপিট করুন। এই এক্সারসাইজটি কিন্তু অনিদ্রার জন্য দারুণ উপকারী।

স্ট্রেসের মোকাবিলা করার জন্য সোজা হয়ে কোথাও স্থির হয়ে বসুন। সুখাসনে বা চেয়ারে বসে এই এক্সারসাইজটি করা ভালো। প্রথমে গভীরভাবে কয়েকবার শ্বাস নিন ও শ্বাস ছাড়ুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে শরীরের প্রতিটি মাসলের উপর পাঁচ সেকেন্ড মনোনিবেশ করুন। যখন যে মাসলের উপর মন দেবেন, তখন সেটি যেন অনেকটা আলগা থাকে৷ পায়ের পাতা থেকে শুরু করাই ভালো৷ তবে এর সঙ্গে যেন শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়াটি সমান তালে চলতে থাকে। দশ মিনিট এই এক্সারসাইজটি করলেই আপনার স্নায়ু অনেকটা শান্ত হয়ে আসবে।

লিখেছেন: নবনিতা ঘটক