রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই বিবাদের প্রকৃত কারণ হল ইউক্রেনের NATO-তে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ। আমেরিকাও চায় যে, ইউক্রেন NATO অর্থাৎ NORTH ATLANTIC TREATY ORGANIZATION-এর সঙ্গে যুক্ত হোক বা এর সদস্য হোক। এটাই হল রাশিয়ার মাথাব্যথার প্রধান কারণ। ইউক্রেন  NATO-র সদস্য হোক এটা রাশিয়া কোনভাবেই চায় না। তাই রাশিয়া আমেরিকার থেকে শুধু আশ্বাসই নয়, তাদের থেকে লিগাল গ্যারান্টিও চায়, যাতে ইউক্রেন কোনওভাবেই NATO-র সদস্য হতে না পারে।


NATO কী ?

১৯৪৯ সালে আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও আরও ৮টি ইউরোপের দেশ মিলে এই NATO তৈরি করে। এখন এই অর্গানাইজেশনে ৩০টি দেশ রয়েছে। এই NATO-র সদস্য দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে জুড়ে থাকে বা একে অপরকে সাহায্য করে। এই অর্গানাইজেশনের অর্ন্তভুক্ত কোনও দেশের উপর যদি বাইরের কোনও দেশ আক্রমণ করে বা আক্রমণের কথা বলে সেক্ষেত্রে NATO-র যত সদস্য দেশ আছে তারা সবাই একত্রিত হয়ে যায় ও বাইরের সেই দেশকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে।


NATO

এবার প্রশ্ন ইউক্রেন কেন NATO-র সদস্য হতে চায়? ইউক্রেন জানে যে, তারা নিজেদের শক্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে লড়তে পারবে না। কারণ, ইউক্রেনের কাছে না আছে রাশিয়ার মতো সেনা, অত্যাধুনিক হাতিয়ার বা অর্থবল। ২০১৪ সালে এই রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া নামের একটা অঞ্চলের কার্যত দখল নিয়ে নেয় ও নিজেদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করে। ইউক্রেনের এখন ভয়, তারা যদি নিজেদের শক্তি না বাড়ায় তাহলে রাশিয়া ফের তাদের এলাকা দখল করবে। ঠিক এই নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থেকেই ইউক্রেন চাইছে NATO-র সদস্য হতে। যাতে তারা সুরক্ষিত থাকতে পারে।



রাশিয়ার এত মাথাব্যথা কেন?  

যে প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে তা হল ইউক্রেন যদি  NATO-র সদস্য হয়ে যায়, তাহলে রাশিয়ার এত মাথাব্যথা কেন?  রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ যেমন এস্টোনিয়া, লাথবিয়া একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। কিন্তু, এখন এই দেশগুলো NATO-র সদস্য। রাশিয়ার চিন্তা হল, যদি ইউক্রেনও NATO-র সদস্য হয়, তাহলে রাশিয়াকে এই NATO কিন্তু চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে। ফলে আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশের রাশিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করা সহজ হয়ে যাবে। যা তাদের উদ্বেগের বা ভয়ের একটা কারণ বলা যেতে পারে। আর রাশিয়া এটাও খুব ভালোভাবে জানে, যদি ইউক্রেন NATO-র সদস্য হয়, তাহলে NATO-র যে দেশগুলো আছে তারা কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলে যাবে।


NATO-র জন্ম কেন হয়েছিল ? 

এখানে আর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা না বললেই নয়। তা হল, এই  NATO-র জন্মই হয়েছিল রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে বা সোভিয়েত ইউনিয়নকে একঘরে করতে। এই বিষয়টা বুঝতে গেলে একটু ইতিহাসের দিকে নজর দিতে হবে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। ইতালি ও জাপানের বিরুদ্ধে আমেরিকা, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন- এই দেশগুলো যুদ্ধ করেছিল। ১৯৪৫ সালে জাপানের উপর পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকা ও বিশ্বযুদ্ধের শেষ হয়। কিন্তু, আমেরিকার এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা প্রশ্ন তোলে, যুদ্ধের সহযোগী দেশ হয়েও আমেরিকা কেন তাদের এই পরমাণু বোমা সম্পর্কে কোনও তথ্য দেয়নি বা তাদের থেকে এই তথ্য গোপন রেখেছিল। এই যে মনোমালিন্য তাই দুই দেশকে কার্যত COLD WAR-এর দিকে টেনে নিয়ে যায়। দুই দেশই সেই তখন থেকেই শক্তি বৃদ্ধি করতে তৎপর হয়।