মাগুরাঃ জেলা শহর হতে দেড় মাইল দূরে আঠারখাদা গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী মঠ অবস্থিত। সুপ্রচীনকালে মঠস্থল কালিকাপুর শ্মশানতলা নামে খ্যাত ছিল। গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই স্থানটি ছিল সন্ন্যাসীদের তপস্যাস্থল। প্রাক ষোড়শ শতক হতে পূণ্যাত্মা ব্যক্তিরা তীর্থে যেতেন এখান থেকে নবগঙ্গা নদী ধরে। সে কারনে ঐ সময় উক্ত স্থানটিতে সাধুজনদের সমাগম ঘটত প্রচুর। ঋষি বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘আনন্দমঠ’-এ এই শ্মশানের নিখুঁত চিত্র চিত্রায়িত আছে। মঠটি নলডাঙ্গা রাজবংশের একটি অবিস্মরণীয় কীর্তি।


ধার্মিক বিষ্ণুদাস হাজরার তপোবন এই বংশের জমিদারীর রুপ দিলেও, সন্ন্যাসী ব্রহ্মাণ্ডগিরির কৃপাবলেই বংশের রাজশ্রী উপাধী লাভ হয়। বিষ্ণুদাসের মানসপুত্র শ্রীমন্ত দেবরায় ১৬০৩ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহের কাছ থেকে দেবরায় উপাধী লাভ করেন। সন্ন্যাসী ব্রহ্মাণ্ডগিরি ছিলেন শ্রীমন্ত দেবরায়ের দীক্ষাগুরু। ব্রহ্মাণ্ডগিরি তখন এই শ্মশানেই থাকতেন। মঠস্বামী তখন রঙ্গমাচার্য মহারাজ। রঙ্গমাচার্য মহারাজের শিষ্যদের অন্যতম ছিলেন এই ব্রহ্মাণ্ডগিরি। তৎসময় শ্মশান সংলগ্ন মঠে রহস্যময়ী যন্ত্রাঙ্কিত একখানি শিলাখণ্ড ও বালীমূর্তি ছিল। ব্রহ্মাণ্ডগিরির আদেশে শ্রীমন্ত দেবরায় মায়ের প্রকাণ্ড মন্দির ও সাধুদের কষ্ট লাঘবে বড় আশ্রম তৈরি করেন। তাছাড়া মায়ের সেবা ও সাধুদের ব্যয় নির্বাহের জন্য শ্রীমন্ত দেবরায় ২৫০ বিঘা নিষ্কর জমি দেবোত্তর দান করেন। রাজা চন্ডীচরণ, রাজা ইন্দ্রনারায়ণ ও রারার সুরনারায়ণ শ্রীমন্ত দেবরায়ের দীক্ষাগুরুর শিষ্য ছিলেন। রাজবংশের পঞ্চম পুরুষ রাজা চন্ডীচরণের মাধ্যমে ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে শাহ্ শুজার আশীর্বাদে বংশের রাজ উপাধী আসে। সন্ন্যাসী ব্রহ্মাণ্ডগিরির আদেশে রাজা ইণ্দ্রনারায়ণ কাশী হতে ভাষ্কর্য এনে অপূর্ব এক কালীমূর্তি তৈরি করে মঠে প্রতিষ্ঠা করেন। মায়ের নামরাখেন “ইন্দ্রেশ্বরী”। ভক্তের মনোবাসনা সিদ্ধ করে মা সিদ্ধেশ্বরী হলেন। অভয়দায়িনী, বিপদনাশিনী, নীলাবরণী শ্যামা মা অনন্তকাল ধরে মঠে অবস্থান করে ভক্তদের অভয় দেন ও রক্ষা করেন।

কলের প্রবাহে মঠের সম্পত্তি বেদখল হতে হতে বর্তমানে সামান্য কয়েক বিঘা জমির উপর নবনির্মিত মন্দিরে মা অবস্থান করছেন এবং ভক্তদের সেবা পূজা গ্রহণ করছেন।

নবনির্মিত মন্দিরের উদ্বোধন তারিখ অনুযায়ী প্রতি বছর ৩০ বৈশাখ শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও মন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ৩০ বৈশাখ ১৪২৯ বাংলা শনিবার দিনব্যাপি নানা আয়েজনের মধ্য দিয়ে শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও মন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।


সুমন বিশ্বাস, মাগুরা প্রতিনিধি

বাংলাদেশ দর্পণ