চলতি মাসে মোট ৭০ টি  সংখ্যালঘু আদিবাসী পরিবার বাংলাদেশ  ত্যাগে বাধ্য হয়। বান্দরবানের লামার ৬৯টি আর ঢাকার ১টি পরিবার নভেম্বর মাসে দেশত্যাগ করে নিরাপত্তাহীনতায়।


গত ০৭ বছর যাবৎ পিন্টু  লাল দাসের পরিবার Visible এবং Invisible Insecurity  এর কারণে তার বসবাসের আবাসিক ঠিকানা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বেশ কয়েকবার ধর্মীয় উগ্রবাদীরা তাকে ও তার পরিবারকে উদেশ্য করে হামলার চেষ্টাও করে। সন্তান ও পরিবারের কথা চিন্তা করে যাননি থানায়, পরে যদি মৌলবাদীরে টার্গেটে পড়েন। বাংলাদেশে যখন মুক্তমনা ব্লগারদের উপর হামলা শুরু হয় , পিন্টু এ নিয়ে লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ করতেন। ফলে কখনও কখনও বিভিন্ন মৌলবাদীদের আক্রোশের মুখে পড়েন। রাস্তায় চলাচলের সময় কখনো কখনো মনে হতো তার গতিবিধি  অনুসরণ করেছে। ৫ই আগস্ট ২০১৬ সালের  শুক্রবার, ঐদিন সন্ধ্যায় কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে  বাসায় ফিরছিলেন, এতিমখানা বাসস্ট্যান্ডে আসার পরে একজন ফর্সা-লম্বা হুজুর( যার গালে বড়সড় কাটা দাগ ছিল এবং পিঠে ঝুলানো ব্যাগ ছিল) এসে  আজাদ কোয়ার্টার এর রাস্তা জিজ্ঞেস করেন, তাকে আজাদ কোয়ার্টার এর রাস্তা দেখিয়ে চলে আসে পিন্টু  হঠাৎ মনে হলো কেউ তার পিছন নিয়েছে, তখন পিছনে তাকিয়ে দেখেন ঐ হুজুর তার পিছনে পিছনে আসছে এবং তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। পিন্টু তখন আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে এগিয়ে একটা চলন্ত রিকশায় চড়ে বাসায় চলে আসেন। কোনো রকম ঝামেলার ভয়ে থানা পুলিশের কাছে যাননি ।গত  ১০ই  আগস্ট ২০১৬  বুধবার  রাত ন'টা নাগাদ তার বাসায় মুখোশ  পড়া  অবস্থায় একজন পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে হামলার উউদ্দেশ্যে আসে। পিন্টু দাসের স্ত্রী তা দেখে  চিৎকার করে বাড়ির মালিককে ডাকতে থাকেন মানুষজন চলে আসলে ঐ দুর্বৃত্ত পাশের বাড়ির ছাদ দিয়েই পালিয়ে ছিল। পিন্টু দাস তখন ১৩৯/৭ ভাগলপুর লেন বিডিআর সেকশন ঢাকার এই  ফ্ল্যাটে থাকতেন।পিন্টু দাসের ছেলে কুশ কৌশিক দাস(Kush Kaushik Das) ঢাকার হাজারীবাগ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো(ওখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেমেয় একসঙ্গে পড়ানো হয়) হিন্দু বলে  ক্লাসের অ-হিন্দু শিক্ষার্থীরা তাকে বিভিন্ন সময় ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতো  এবং তার সঙ্গে মিশতো না বা খেলতো না। গত ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ইং  কৌশিকের হাতে বাধা লাল সুতা খুলতে জোরাজোরি করেছিলো  এবং তার ইরেজার কেড়ে নিয়ে বলেছিল তুমি মুসলিম না হলে তোমার ইরেজার দিব না। এবং বারবার বলেছিল তুমি মুসলিম হয়ে যাও। পরিবর্তীতে ঐ বিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হয় পিন্টু দাসের ছেলে। গত ২৯ এপ্রিল ২০১৯ইং  সোমবার দুপুর  ১২ টা নাগাদ পিন্টু দাসের স্ত্রী বাইরে থেকে বাসায় ফিরছিলেন এমন সময় সিড়িতে পিছন থেকে তাকে আক্রমণ করে প্রথমে কিল ঘুসি দিয়ে শুরু করে পরে  ধস্তাধস্তি শুরু হলে তার স্ত্রী জোরে চিত্কার করে এবং আক্রমনকারীরা  পালিয়ে যায়। ঘটনার পরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তার স্ত্রী অনেকদিন বাইরে প্রয়োজনীয় কারণেও যেতে ভয় পেত। সবসময় আতঙ্কে থাকতেন। বাড়িয়ালা কে জানানোর পরে তিনি  সিসিটিভির ব্যবস্থা করেছিলেন। তারপর তারা ঐ বাসা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য। গত ২৩ই আগস্ট ২০২২ রাত ন'টা নাগাদ পিন্টু তার পরিবারের সদস্যরাসহ ফার্মগেটে একটা হোটেলে  রাতের আহারের জন্য ঢুকতে ছিলা হঠাৎ এক হুজুর তাদের হুমকি দিতে শুরু করে কেন পিন্টু দাসের  স্ত্রীর মাথায় কাপড় নেই এবং লাঠি নিয়ে পিছনে আসছিলো। সেদিন ও পিন্টু দাসের স্ত্রী খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিলেন।  অবশেষে পিন্টু লাল দাস নিরাপত্তাহীনতার অভাবে নিজ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

গত ২২ নভেম্বর ২০২২ ইং চরম নিরাপত্তাহীনতার কারণে সোমবার (২১ নভেম্বর) বান্দরবান জেলার রুমা উপেজলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়ন থেকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অনেক নারী-পুরুষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মিজোরাম প্রদেশের লংতড়াই জেলার চংতে মহকুমার সিমেনাছড়ায় চলে যেতে বাধ্য হয় বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, আদিবাসী নারী ও শিশু সহ ৬৯ পরিবারের ২৭৮ জন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে শিশুসহ ১৪৯ জন পুরুষ ও ১২৯ জন নারী। ৬৯ পরিবারের মধ্যে রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের থিংদলতে পাড়া থেকে ৩৪ পরিবার, চৈক্ষ্যং পাড়া থেকে ১২ পরিবার, সালৌপি পাড়া থেকে ১২ পরিবার, থেইখিয়াং পাড়া থেকে ২ পরিবার, সুনসং পাড়া থেকে ৫ পরিবার, প্হাই নোয়াম পাড়া থেকে এক পরিবার এবং রুমানা পাড়া থেকে ৩ পরিবার রয়েছে বলে জানা গেছে। এই মাসে মোট ৭০টি সংখ্যালঘু আদিবাসী পরিবার দেশত্যাগে বাধ্য হয়। সকল  সংখ্যালঘুরা নিজ ও  পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা ক্রমাগত নীপিড়নের করণে দেশ ছাড়ছে। সেখানে ঐক্য পরিষদ বলছে ৭২ সংবিধানে ফিরে যাবে তারা এখন প্রশ্ন হলো কোন সংবিধান যেটা ১৯৮৮ সালে অবৈধ এরশাদ সরকার ও বৈধ এবং গণতান্ত্রিক উপয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে বাদ দিয়েছে । আমরা এ সংবিধান দিয়ে কী করবো যদি সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার কারণে প্রতিদিন দেশ ত্যাগ করে । এর উত্তর কী আছে ঐক্য পরিষদের কাছে। 

প্রদীপ চন্দ্র ,গবেষক, HRCBM USA