কর্মহীন হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিন গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ সাঁওতাল পরিবার। এই তিনটি গ্রাম হলো- কুয়ামারা, মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া। তারা কোনো ধরনের সরকারি ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

তাদের অভিযোগ, পুলিশ, প্রশাসন ও রংপুর চিনি মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে স্থানীয় সরকার তাদের কোনো সহায়তা করেনি।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনা আতঙ্কে এ তিন গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতেই বসে আছেন।

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির জয়পুরপাড়ার সহ-আহ্বায়ক সুফল হেমব্রম জানান, এই তিন গ্রাম মিলে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার বাস করি। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের সংঘর্ষের পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের শত্রু মনে করে। তারা আমাদের সরকারের ত্রাণ সামগ্রীও দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

কুয়ামারা পল্লির মালতি হেমব্রম (৬৫) বলেন, ‘আমরা ৩০০ পরিবার কুমারা বিলের পাশে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছি। করোনার ভয়ে কারণে কেউই বাইরে বের হচ্ছে না। ফলে, আমাদের হাতে কোনো কাজ নেই এবং ঘরেও খাবার নেই।’

কুয়ামারা পল্লির প্রিরিনা হেমব্রম বলেন, ‘আমরা শুনেছি সরকার দরিদ্রদের জন্য অর্থ ও চাল সরবরাহ করছে। কিন্তু, আমাদের সম্প্রদায়ের কেউই সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে না।’

জয়পুরপাড়া গ্রামের বুদনী হাসদা (৬৫) বলেন, ‘আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকার বলছে ঘরে থাকতে, আমরাও করোনার ভয়ে বের হতে পারছি না। ঘরে কোনো খাবার নেই। সরকার যদি আমাদের সাহায্য না করে আমরা কীভাবে বাঁচব?’

আজ সন্ধ্যায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে প্রথম পর্যায়ে এক লাখ টাকা এবং ২০ টন চাল পেয়েছি। ইতিমধ্যে সেগুলো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। দুদিন আগেও আমরা ২০ টন চাল এবং এক লাখ টাকা পেয়েছি। আজ সাহেবগঞ্জ-বান্দা খামার এলাকার ২৫-৩০ টি পরিবারের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আরও ৩০০-৪০০ সাঁওতাল পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে।’

গোবিন্দগঞ্জের সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা মাত্র ১ লাখ টাকা ও ২০ টন চাল পেয়েছি। যা  গোবিন্দগঞ্জের ১৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আমরা মূলত দরিদ্র-বয়স্ক মানুষের মাঝে এসব ত্রাণ বিতরণ করেছি। কারণ, তারা করোনা কারণে ঘরে থেকে বের হতে পারবে না এবং তাদের আয়ের কোনও উত্স নেই। এখানে  সাঁওতাল ও বাঙালির কোনো পার্থক্য নেই।’

 ‘তারপরেও যদি সাঁওতালরা ত্রাণ না পেয়ে থাকেন, তাহলে তাদের দাবিগুলো সরকোরের কাছে আলাদাভাবে পাঠানো হবে,’ যোগ করেন তিনি।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘জেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত (০১.০৪.২০) ৮ হাজার ৯০০ পরিবারের কাছে ৯৪ টন চাল ও ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা বিতরণ করেছে। তাদের আরও ১৪২ টন চাল ও ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বিতরণ করতে হবে।’

কিন্তু, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম এলাকার সাঁওতালরা অভিযোগ করেছেন, তারা এখনও কোনো ত্রাণ সামগ্রী বা নগদ অর্থ পাননি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম এলাকায় বিতর্কিত জমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা নিয়ে সাঁওতাল, রংপুর সুগার মিলের কর্মচারী এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিনজন সাঁওতাল মারা যান ও নয় পুলিশসহ ২০ জন আহত হন।