মাদারীপুরের চরমুগরিয়ায় শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসা অন্তত ১৫টি বানরকে বিষাক্ত খাবার দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৫ মে) জেলার চরমুগরিয়ার কলেজ রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, এই এলাকায় শত বছর ধরে বানরগুলো বসবাস করে আসছে। স্থানীয় মানুষও তাদেরকে খাদ্যসামগ্রী দিত। কিন্তু বানরদের দেওয়া খাবারে পরিকল্পিতভাবে বিষ মিশিয়ে হত্যা করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় সচেতন মহল। এমনকি এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে পুলিশও উদাসীনতা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার বানরগুলো যখন বিষক্রিয়ার একটার পর একটা মারা যাচ্ছিল, তখন স্থানীয় একজন পুলিশকে মোবাইল ফোনে ঘটনাটি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। পুলিশ তখন ফোনদাতাকে সশরীরে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে বলে। ঘটনার অনেক পরে থানা থেকে দু’জন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই চলে যায়।

এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন বিভাগের পরিচালক জহির আকোন বলেন, চরমুগরিয়া, কলেজ রোড, মাদারীপুর-এ বিষ প্রয়োগে বানর হত্যার বিষয়ে বন সংরক্ষক যশোর, ডিএফও ফরিদপুর এবং সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি আলোচনা করি।

এ বিষয়ে বন সংরক্ষক, যশোর সার্কেল জনাব মোল্লা রেজাউল করিম জানান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সামাজিক বন বিভাগ, ফরিদপুরের নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিনে তদন্ত করেছেন এবং বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। মাদারীপুর জেলা প্রশাসন এ বিষয়টি নজরদারি করছে।

সেই সাথে যে ১টি বানর মারাত্মক আশঙ্কাজনক ভাবে বেঁচে ছিলো সেটি প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছে।

Rhesus Macaque প্রজাতির এ বানর বাংলাদেশের সংকটাপন্ন প্রজাতি। বন বিভাগ অনতিবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মুনশী বলেন, এখানকার মানুষদের বানর অনেক বিরক্ত করে, তবুও বেশিরভাগ মানুষ এতে বিরক্তবোধ করে না। আরও ভালোবেসে খাবার দেয়। এখানে বিশাল একটা সিন্ডিকেট আছে। বানরের জন্য প্রতিদিন পিকআপ ভরে কলা, রুটি, বাদামসহ আরো কিছু খাবার আসতো। কিন্তু কিছু মানুষ এখানে এসব নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছিল। আমরা এসব বানরদের আগলে রাখতাম। কিন্তু হঠাৎ করে যে কারা এসব করে ফেললো বুঝলামই না।

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সৌরভ মাহমুদ নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, কী কারণে মানুষ এদের বিষ দিয়ে মারলো? মানুষ কেন এত বিরক্ত হলো? খাবারের অভাবে মানুষ চুরি, ডাকাতি, খুনও করে। বানরগুলো খাবারের অভাবে লোকালয়ে হানা দিবে, মানুষের ফলফলাদি খাবে এটা তো সাধারণ ব্যাপার। কারণ তারা জানে না এটা ‘মানুষের গাছের ফল’। কিছুদিন আগে সংসদে এ বানরের খাবারের জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা হয়েছিল। জানিনা টাকা বরাদ্দ হয়েছিল কিনা? তাছাড়া এ বন্যপ্রাণীর রক্ষক কারা? বন বিভাগ নিশ্চয়। তারা কি এ বানরদের নিয়মিত খাবার দিচ্ছে? খবর নিয়েছে? এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। আমরা দেখেছি কেশবপুরের হনুমান খাবারের অভাবে লোকালয় হানা দিচ্ছে, কলার ট্রাকে অন্য জেলায় চলে গেছে। বন বিভাগ আসলে কোন টেকসই ও বৈজ্ঞানিক সুরাহা করেনি সমস্যাগুলোর। মানুষ হয়তো অতিষ্ঠ ছিল। তবে আমি বানরগুলোকে হত্যা করার জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যারা জড়িত তাদের বিচার করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। মানবতার জয় হোক।

নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাদেশদর্পণ.কম