যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় স্কুলের নাম নারিকেলবাড়ীয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। নারিকেলবাড়ীয়া হাই স্কুল নামেই বিদ্যালয়টি সমধিক পরিচিত। উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে চিত্রা নদীর পাড়ে এটি অবস্থিত।

এই স্কুলটির সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক বিরাট ইতিহাস।

কাগজে কলমে স্কুলটি ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও মূলত স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে।১৯১৭ সালে স্কুলটি এমই স্কুল হিসেবে প্রথম আত্নপ্রকাশ করে। তখন কাঁচা দেয়াল ও টিন শেডের ঘরে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য যে সব ব্যাক্তিরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা করেন তাদের মধ্যে ছিলেন বাবু বৈদ্যনাথ কুন্ডু (নারিকেল বাড়িয়া), মোঃ ইমান আলী মোল্লা (বয়রা), মুন্সি তানজুয়ার রহমান (ইন্দ্রা)-সহ আরো অনেকে। পরবর্তীতে ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে হাইস্কুল হিসেবে উন্নীত করা হয়। আর তখন থেকেই লেখা হয় স্কুলটি ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু পেছনের ২৭ বছরের সংগ্রামী ইতিহাস আর যেসব মানুষের অবদান রয়েছে তা আজ অনেকের কাছে অজানা।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পরে স্কুলের উন্নতির জন্য বিশেষ অবদান রাখেন- বাবু নিত্যানন্দ সাহা (নারিকেলবাড়িয়া), বাবু জগদীশ চন্দ্র সাহা (নারিকেলবাড়ীয়া), পীর মোঃ আব্দুর রহিম (দয়ারামপুর), মোঃ দলিল উদ্দিন বিশ্বাস (খানপুর), মোঃ আব্দুস সামাদ (ক্ষেত্রপালা)-সহ প্রমুখ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্কুলটিতে পাকিস্তানী সৈন্যরা ক্যাম্প স্থাপন করে। বর্তমান মেয়েদের কমনরুমের জায়গাটি ছিল সাধারণ মানুষ ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ধরে এনে হত্যা এবং অত্যাচার করার স্থান। আর তাই উপজেলার বধ্যভূমির তালিকা খুঁজতে গেলেই উপরের দিকেই চোখে পড়ে নারিকেলবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম। স্বাধীনতার পরে অত্র প্রতিষ্ঠানের দুই জনপ্রিয় শিক্ষক খুন হলে তাদেরকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সমাধিস্থ করা হয়।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৬০০ কোমলমতি শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিভিন্ন সৃজনশীল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আর তাই পড়াশুনাতে শ্রেষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে।

সন্দীপ মন্ডল, নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাদেশদর্পণ.কম