বাগেরহাটের পাঁচটি উপজেলার  বিভিন্ন নদী ও খাল খননের ফলে জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন জেলার পাঁচ উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। নৌ পথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের ফলে খরচ ও হয়রানি রোধ, পানি নিষ্কাশনের কারণে বেড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন।  

ফকিরহাটের মাছ ও পান চাষি শওকত শেখ বলেন, আগে প্রতি বছর অতিবৃষ্টিতে বাড়িঘর ও ক্ষেত খামারে জল জমে থাকতো। এতে ফসল নষ্ট ও মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে আমরা বিপদে পরতাম। তবে এবার ভৈরব নদী খননের কারণে আর কোন জল জমেনি, সব জল এখন খালে ও নদীতে সহজেই নেমে যায়। 

মোল্লাহাট উপজেলার চাঁদেরহাট গ্রামের কৃষক নন্দবালা বলেন, আমরা এখন নৌকায় করে ধান, মাছ ও সবজি আনতে পারছি। এতে আমাদের অনেক খরচ কম হচ্ছে। আগে জল ও কচুরিপানা আটকে থাকতো এখন খাল থেকে বের হয়ে যায়। আমাদের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়েছে। এতে আমরা খুব খুশি হয়েছি।

খাল খননকে স্বাগত জানিয়ে ফকিরহাট উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. হিটলার গোলদার বলেন, নদী ও খাল খননের ফলে চিংড়ি শিল্পে এবং কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ভৈরব ও চিত্রা নদীসহ বিভিন্ন খাল খননে সময় মত কৃষকরা পানি পাচ্ছেন, এখন ফসল ভাল হচ্ছে। এবার সৃষ্টি হয়নি কোন জলাবদ্ধতা, অতিবর্ষণে নদী ও খালে পানি বের হওয়ায় ক্ষতি হয়নি চিংড়ি ঘেরের। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকার প্রধান ও স্থানীয় এমপি শেখ হেলাল উদ্দিনকে ধন্যবাদ জানাই। আরও যেসব খাল খনন প্রয়োজন সেগুলো দ্রুত খননের দাবী জানাই।

জানা গেছে, ৮০‘র দশকে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদী ও খাল খনন করা হয়েছিল। এরপর থেকে নানা অবৈধ স্থাপনা তৈরি, দখলবাণিজ্য, অপরিকল্পিত মাছ চাষের কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে ভরাট হয়ে যায় খালগুলো। যার ফলে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা, পানি নিষ্কাশন না হওয়াসহ জীবন যাপনে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতো। 

২০১৮-২০ অর্থবছরে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৬/১ পোল্ডারে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে জেলার ফকিরহাট, কচুয়া, মোল্লাহাট, বাগেরহাট সদর ও চিতলমারী উপজেলায় বর্তমানে ৩৩টি খাল ও দুটি নদীর প্রায় একশ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। এই খননের ফলে এবার বৃষ্টি মৌসুমে হয়নি কোন জলাবদ্ধতা। স্বস্তি ফিরেছে চিংড়ি, সবজি ও ধান চাষিদের মনে। কমেছে পরিবহন খরচ। মাঠ ও ক্ষেত থেকে নৌকা যোগে মাছ, সবজিসহ পণ্য সরবরাহ করতে পেরে খুশি চাষি ও এলাকাবাসী।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, খাল খনন কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ সকলের সহযোগিতায় আমরা চলমান রেখেছি। খালের দুই পাশে বনায়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে।