বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আর এ দেশের সিংহ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। দেশের শতভাগ মানুষ কৃষকের উপর নির্ভরশীল। যে দেশের কৃষকেরা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে ফসল ফলায়ে মানুষের মুখের অন্ন জোগায়, সে দেশের কৃষকেরা পায়না কোন মর্যাদা, উৎপাদিত ফসলের ও কোন ন্যায্য মুল্য দেয়া হয় না। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই কৃষকের উপর ভর দিয়েই উচ্চ পর্যায়ের যাবতীয় যা কিছু সম্পাদন হয়ে থাকে।
দেশে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, যেকোন চাকরী শেষে তাদের পেনশন ভাতা, এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালে জীবন বাঁজি রেখে যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও ভাতা চালু হয়েছে। অথচ কৃষকের নামে কোন ভাতা চালু নেই। হয়তো অনেকে বলবেন যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা তো কৃষকের মধ্যেই পেয়ে থাকে। কিন্তু না আমরা বলছি কৃষক পেনশন ভাতা চালু করতে।
কারন ষাটোর্ধ বয়সী যেসব কৃষক তারা না পারে কোন চাষ কাজ করতে, না পারে অন্য কিছু করে জীবন রক্ষা করতে। তাই তাদের বেঁচে থাকতে একটা অবলম্বন দরকার। সমস্ত দিক বিবেচনাপুর্বক গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের সবিনয় নিবেদন- এ দেশের কৃষকের পেনশন ভাতা চালু করা হোক। এই দাবি টা উঠে এসেছে সম্প্রতি কৃষক প্রতিনিধিদের এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে। সেই কৃষক প্রতিনিধিদের গোলটেবিল বৈঠকের স্থানের পরিচয় একটু বিষদভাবেই দিতে হয়। কারন সারা বাংলাদেশের একটা বৃহৎ কৃষক সংগঠন যার নাম গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে অবস্থিত অত্র অঞ্চলের ৬২ টি গ্রামের ৬৪ টি কৃষি ক্লাবের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র। কেন্দ্রটি ২০০১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট(বারি) এর তৎকালীন মহাপরিচাক ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক উদ্বোধন করেছিলেন। সারা বাংলাদেশের একটা বৃহৎ কৃষক সংগঠন,যার অভুতপুর্ব অবদান সারা দেশের কৃষক,কৃষিবিদ ্ও কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাগন একবাক্যে স্বীকার করে থাকেন। এই কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রটি অত্র অঞ্চলের ৬৪টি কৃষিক্লাবের নিয়ন্ত্রনের কেন্দ্রীয় সংগঠন হিসাবে কাজ করে থাকে। এই কেন্দ্রের উদ্যোগে যশোরের গাইদঘাট গ্রামে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। যে কারনে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল এলাকা হিসাবে যশোর জেলা সারা বিশ্বের মধ্যে স্থান পায়। বৃহত্তর যশোর অঞ্চল সারা দেশের মধ্যে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল এলাকা হিসাবে সারা বিশ্বের মধ্যে স্থান পাওয়াই এই কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেন ও তার সহযোগী বন্ধু সাংবাদিক লক্ষ্মন চন্দ্র মন্ডলকে ২০১০ সালে ঢাকার ফার্মগেটে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস মিলনায়তনে তখনকার কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পুরস্কৃত করেছিলেন।
সেই কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেনের জীবোদ্দশায় এই কেন্দ্রের উদ্যোগে তখন এ এলাকায় দেশের সকল স্বনামধন্য কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও অগনিত বিদেশী বিজ্ঞানীদের পদচারনা ঘটেছিল। সেই বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেলকে সামনে নিয়েই এখন সারা দেশেই চলছে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের আন্দোলন।
এই গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রে বিগত ১০ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে সকল কৃষিক্লাবের কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকে অনেক কিছু আলোচনার মধ্যে এ দেশের কৃষকের পেনশন ভাতা চালু করা হোক দাবিটা প্রাধান্য পেয়েছিল।
লক্ষ্মন চন্দ্র মন্ডল ( লেখকঃ সাংবাদিক ও সংগঠক)