কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড়ে প্রকাশ্যে মা ও শিশুপুত্রসহ তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার একমাত্র আসামি পুলিশের এএসআই সৌমেন রায়।

সোমবার দুপুর সোয়া ১টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক নিশিকান্ত সরকার আসামিকে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। পরে বিচারক রেজাউল করীমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সৌমেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সঞ্জয় রায় বলেন, ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার সৌমেন রায় হত্যার দায় স্বীকার করে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ধরে জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, স্বীকারোক্তির মধ্যে প্রধানত ছিলো, আসমা ও সৌমেনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে ক্ষোভে সৌমেন রায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে নিহত আসমার মা কুমারখালী উপজেলার নাথুরিয়া গ্রামের আমির আলীর স্ত্রী হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে মেয়ে ও নাতি হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

এদিকে নিহত আসমা খাতুন এএসআই সৌমেন রায়ের বিধিসম্মত বৈবাহিক স্ত্রী কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার।

তিনি বলেন, আসমার পরিবার ও সৌমেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সৌমেন রায় আসমা খাতুনের ৩য় স্বামী। আসমার সাথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিশু রবিন আসমার প্রথম স্বামীর সন্তান। অন্যদিকে সৌমেন রায়ের বাড়িতে রয়েছে বিবাহিত স্ত্রী ও বাচ্চা। এইসব ঘটনাগুলোর মধ্যে কার সাথে কি ধরণের সম্পর্ক এবং টানাপোড়েনই বা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে- যার কারণে এই হত্যাকাণ্ডের সবকিছুই বিবেচনায় নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।

কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, অন ডিউটি বা দাপ্তরিক অনুমোদন ছাড়া একজন পুলিশ সদস্য সরকারি অস্ত্র নিয়ে খুলনা থেকে কুষ্টিয়াতে এসে কিভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেই বিষয়ে কার কতটুকু দায় বা কর্তব্যে অবহেলা ছিলো, সবকিছু খুটিনাটি বিশ্লেষণ করে তদন্ত করতে কুষ্টিয়া ও খুলনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রোববার সকালে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড়ে প্রকাশ্যে দাবিকৃত নিজের স্ত্রী ও শিশুসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেন খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত পুলিশের এএসআই সৌমেন রায়। ওই ঘটনায় নিহতরা হলেন- কুমারখালী উপজেলার সাওতা গ্রামের বাসিন্দা মেজবার খানের ছেলে বিকাশকর্মী শাকিল খান (২৮), নাথুরিয়া বাশগ্রামের বাসিন্দা আমির আলীর মেয়ে আসমা খাতুন (৩৪) এবং আসমার শিশুপুত্র রবিন (৭)।