ঢাকা:দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়, বেশ আগে থেকে দেখা গেছে এটি। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ৩ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে তবে বিচার হয়েছে মাত্র দু-একটা। এসব অপরাধের সামান্য বিচার না হওয়ায় নতুন নতুন সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার একটি সঠিক বিচার হতো তাহলে দেশে এমন ঘটনা কম ঘটতো। দেখা গেছে এ পযর্ন্ত এমন ঘটনার কোনটারই সঠিক বিচার না হওয়ায় এসব বেড়েই চলছে।

সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক এ সহিংসতার বিষয় নিয়ে সচেতন মহল করে করেন, সাম্প্রদায়িক ইস্যু থেকে আমাদের সকলের বের হয়ে আসতে হবে। এমন ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গে হাঙ্গামা হাঙ্গামা না করে আইনের সহযোগিতা নিতে হবে। তাহলে এ অপরাধ  কিছুটা কমে যাবে।

জানা যায়, ২০০১ সালের অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় বিএনপি-জামায়াত জোট ভোটে জেতার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হয় হিন্দু জনগোষ্ঠী। যদিও ভয়-ভীতির কারণে নির্যাতিত অনেকে মামলাও করতে পারেনি তখন। আবার কোন কোন মামলায় রাজনেতিক প্রতিপক্ষকে আসামি করা হয়েছিল। 

২০০১ এর অক্টোবরে শুরু হওয়া এসব হামলার দুই মাসের মাথায় ৩৭৫ টি অপরাধের ঘটনার কথা উল্লেখ করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে আইন ও শালিশ কেন্দ্র। সেটিরও কোন অগ্রগতি নেই। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাইকোর্টে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। যে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে সাবেক জেলা জজ মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার।  

এক বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০১১ সালের এপ্রিলে ২৬ হাজারের মতো ঘটনার তথ্য তুলে ধরে ১ হাজার পৃষ্ঠার প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিশন। যদিও পরবর্তীতে ঐ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেনি সরকার। 

নাম বলতে অনিচ্ছুক সচেতন মহলের এক ব্যক্তি বলেন, এ ইস্যু থেকে আমাদের সকলের বের হয়ে আসতে হবে। এবং আইনের সহযোগিতা নিতে হবে। তাহলে এ অপরাধ কমে যাবে।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রায় ২৬ হাজারের মত ঘটনা বের করা হয়েছিল। আমরা ২০১৮ সালে আবারও আদালতে গিয়েছিলাম বিভিন্ন ডিআইজিদের প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা জানি না সে তদন্ত রিপোর্টে কি আছে বা তারা দাখিল করেছে কি না। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই।

আদালতের নির্দেশনার পরও ঐসব ঘটনার কেন অগ্রগতি হলোনা তা নিয়ে প্রশ্ন মানবাধিকার কর্মীদের। 

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, এই যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো আজ পর্যন্ত সরকার থেকে কেউ বলতে পারবে না যে কতগুলো মামলা হয়েছে বা আসামিদের বিচার করে শাস্তি দেয়া হয়েছে কি না। মামলাগুলোর বিচার না হওয়ার কারণেই কিন্তু এখন এমন হামলার সংখ্যা বাড়ছে এবং তারা মনে করে যে অপরাধ করলেও তাদের কোন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না।

ঐসব হামলার বিচার হলে সাম্প্রদায়িক হামলার পুনরাবৃত্তি হতো না বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, যখনই আমরা এসব সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারের কথা তুলি তখন তারা কৈফিয়ত দিতে থাকে যে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। কিন্তু যারা সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছে তাদের কি ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার একেবারেই কম।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল আরো বলেন, ২০০১ এর ঘটনার পর থেকে আমরা ৩৭৫ টি ঘটনা উল্লেখ করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছি। সেই রিটের বিচার এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। কোথায় আছে বা কিভাবে আছে তাও আমরা জানি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং ধর্মীয় কাঠামো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 

তৌহিদুল হক আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এই ইস্যুটি সমাজের বড় একটি অপরাধের আশঙ্কা। বিচার ব্যবস্থা জোরদার করা এবং সমাজে সামাজিক অনুশাসনের কার্যক্রম চলমান রাখলেই এ ধরনের অপরাধ কমে যাবে।

 

প্রতিবেদক,বাংলাদেশ দর্পণ