গাজীপুরঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, করোনার কারণে কারাগারের বন্দিদের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় তাদের পরিবারের সঙ্গে সপ্তাহে একদিন ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কারাবন্দিদের মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি ভিডিও কলে কথা বলার সুযোগ পাবেন। এজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারাগার এখন কেবল শাস্তি কার্যকর করার জায়গা নয়, বরং কারাবন্দিদের বিভিন্ন প্রকার কর্মমুখি প্রেষণা মূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিনত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার ন্যায় গুরু দায়িত্ব পালন করছে দেশের কারাগারগুলো। দেশের সকল কেন্দ্রীয় কারাগারসহ অধিকাংশ জেলা কারাগারে বন্দিদের যুগোপযোগী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বন্দি শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের আয়ের অর্ধেক বন্দিকে দেয়া হচ্ছে। বন্দিদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত হস্তশিল্পজাত সামগ্রী প্রদর্শন ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কাশিমপুর কারা প্রাঙ্গণে ‘কেন্দ্রীয় বিক্রয় ও প্রদর্শণী কেন্দ্র’ ছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন কারাগারে বিক্রয় ও প্রদর্শণী কেন্দ্র রয়েছে। বন্দি কর্তৃক উৎপাদিত কারা পণ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শণ ও বিক্রয় করা হচ্ছে।
 
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে ১২তম ব্যাচ ডেপুটি জেলার এবং ৫৯ তম ব্যাচ কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, কারাগার ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িতদের কারাগারে নিরাপদে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীদের সাজা কার্যকর করা হয়েছে কারাগারে। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস এবং কারাগারের নাম একসঙ্গে মিশে আছে। 

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার কারারক্ষীদের মান উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকারের আমলেই ২০০ বছরের ইতিহাসের সকালের নাস্তায় রুটি ও গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে চার দিন সবজি-রুটি, দুই দিন খিচুড়ি, একদিন হালুয়া-রুটি দেয়া হচ্ছে যা যুগান্তকারী পরিবর্তন। বাংলা নববর্ষসহ বিশেষ দিবসগুলোতে উন্নতমানের খাবারের জন্য বন্দি প্রতি বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। কারাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং বৃদ্ধি করা হয়েছে বন্দিদের সুযোগ সুবিধা। করোনা মহামারি মোকাবেলায় দেশের ৬৮ টি কারাগারে আটক বন্দিদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে।  

মন্ত্রী বলেন, কারাগারে দায়িত্ব পালন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্নতর ও চ্যালেঞ্জিং। কারাগারের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্র সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর এ ধরনের উদ্যোগকে সফল করতে হলে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিক উৎকর্ষ ও কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে এবং ঢাকার কেরাণীগঞ্জে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি” নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের অগ্রযাত্রায় আজকের বাংলাদেশ জেল সমানতালে এগিয়ে চলছে। 

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ মোকাব্বির হোসেন, কারা মহা পরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন, সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল, কারা প্রশিকক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ড্যান্ট (ভারপ্রাপ্ত) সুরাইয়া আক্তার, গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে কারা মহাপরিদর্শক তাঁকে স্বাগত জানান। একটি খোলা জীপে করে প্যারেড পরিদর্শন শেষে তিনি রিক্রুট ডেপুটি জেলারদের র‌্যাংক ব্যাজ প্রদান এবং রিক্রুট প্রশিক্ষাণার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের অন-আর্মড কম্ব্যাট ও পিটি ডিসপ্লে উপভোগ করেন।



প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ