ভারতের উত্তরপ্রদেশে রাজ্যে প্রয়াগরাজ, সাহারানপুর ও কানপুরে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে এগুলো অবৈধভাবে নির্মিত কিন্তু স্থানীয় লোকজন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন - মুসলিমদের টার্গেট করেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে।

সবশেষ ঘটনা ঘটেছে রোববার, প্রয়াগরাজ শহরে - যার আগেকার নাম ছিল এলাহাবাদ। এ শহরেরই করেলি এলাকায় ওয়েলফেয়ার পার্টির একজন নেতা জাভেদ মোহাম্মদের অবৈধ নকশা বহির্ভূত বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়।

বলা হচ্ছে, তিনি ছিলেন গত শুক্রবার এ শহরে জুম্মার নামাজের পর যে সহিংস বিক্ষোভ হয় তার 'প্রধান পরিকল্পনাকারী'। সম্প্রতি ইসলামের নবীকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র নুপুর শর্মা যে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তার প্রতিবাদেই ওই বিক্ষোভ ডাকা হয়েছিল।

এর আগে শুক্র ও শনিবার সাহারানপুর ও কানপুরেও কয়েকজন সহিংসতাকারীর বাড়ি ভেঙে দেয়া হয় বুলডোজার দিয়ে। এর আগে এপ্রিল মাসে দিল্লিতে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের পর বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়।

তারও আগে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অন্তত: ৪৫টি  বাড়িঘর একই ভাবে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব বাড়ি অবৈধভাবে নির্মিত। কিন্তু স্থানীয় লোকেরা বলছেন, দাঙ্গায় উস্কানির অভিযোগের নাম করে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আসলে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ভাঙছে।

প্রয়াগরাজে কি ঘটেছে?
ভারতে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নুপূর শর্মা একটি টিভি চ্যানেলে ইসলামের নবীকে নিয়ে যে  মন্তব্য করেছিলেন - তার প্রতিবাদ জানাতে ভারতের মুসলিমরা সেদেশের নানা স্থানে গত কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন।

এর মধ্যে বিশেষ করে প্রয়াগরাজ এবং সাহারানপুরে জুম্মার নামাজের পর বের করা বিক্ষোভ থেকে ব্যাপক সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এর পর উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আটটি জেলা থেকে তিন শতাধিক লোককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, প্রয়াগরাজের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাভেদ আহমদ হচ্ছেন এই সহিংসতার প্রধান পরিকল্পনাকারী।

বার্তা সংস্থা এএনআই এক টুইট বার্তায় জানায়, প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে বলে একটি নোটিশ দেয়। রোববার সকাল ১১টার মধ্যে তাকে বাড়িটি খালি করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয় । কারণ হিসেবে বলা হয় - বাড়িটি অবৈধভাবে নির্মিত।

এর পর রোববারই বুলডোজার এসে বাড়িটি ভেঙে দেয়।

এর আগে শনিবার কানপুর শহরে মোহাম্মদ ইশতিয়াক নামে এক ব্যক্তির নতুন তৈরি করা বাড়িটি ভেঙে দেয়া হয়। বলা হয়, তিনি কানপুরের সহিংসতার প্রধান অভিযুক্ত জাফর হায়াত হাশমির ঘনিষ্ঠজন।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা আনন্দ প্রকাশ তিওয়ারি বলেন, নিয়মনীতি অনুসরণ করেই ভবনটি ভেঙে দেয়া হয়েছে, এবং ভূমিদস্যুদের অবৈধভাবে নির্মিত বাড়িঘরের বিরুদ্ধে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

এ ছাড়া সাহারানপুর শহরেও শুক্রবারের বিক্ষোভের পর মোট ৬৪ জনকে গ্রেফতার তরে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুজন মোজাম্মেল ও আবদুল বাকিরের বাড়িও ভেঙে দিয়েছে সাহারানপুরের পৌর কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বলছে, এসব বাড়ি অবৈধভাবে নির্মিত।


প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ