কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনাভাইরাস। জেলার সর্বত্র কোভিড-১৯ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই করোনার বিষাক্ত ছোবল। দ্রুতগতিতে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির পরেও জনমনে নেই কোন সতর্ককতা। হাট-বাজার, যানবাহন সবকিছুই চলছে পূর্ণ উদ্যমে।

 

সোমবার (৮ জুন) রাতে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী এ পর্যন্ত জেলার ১৩ উপজেলায় ৭০২ জনের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা। মারা গেছেন ১৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৪০ জন। 

এর মধ্যে ভৈরব উপজেলাতেই করোনা সর্বাধিক শনাক্ত হয়েছে। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩০৫ জন। মারা গেছেন ৫ জন। সর্বশেষ সোমবার (৮ জুন) রাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলায় একদিনেই ৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

 

ভৈরবের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার করোনা রোগীদের জন্য একমাত্র ‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল সদরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য খোলা হয়েছে আলাদা ইউনিট।

 

কিন্তু ভৈরব উপজেলাসহ জেলায় প্রতিদিন যে হারে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে, শিগগির হাসপাতালে কোভিড রোগীর জন্য টেকনিকেল সুযোগ সুবিধা বা চিকিৎসার জন্য শয্যা না বাড়ালে পরিস্থিতি বেগতিক হতে পারে। এ আশঙ্কা করছেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও।

 

ভৈরব উপজেলাকে ইতোমধ্যে সংক্রমণের ‘রেডজোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ভৈরবের পরিস্থিতি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে প্রশাসনিকভাবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও ক্ষণে ক্ষনে পরিস্থিতি জানানো হচ্ছে।

 

সংখ্যাধিক্য অনুযায়ী মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুর পর্যন্ত ভৈরব উপজেলাতেই সবচেয়ে বেশি ৩০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

 

ভৈরবের পরেই সদর উপজেলার অবস্থান। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় পাওয়া গেছে ৯০ জন। এছাড়া তাড়াইল উপজেলায় ৫৩ জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৪৫ জন, বাজিতপুর উপজেলায় ৪১ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৩৭ জন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৩০ জন, কটিয়াদী উপজেলায় ৩০ জন, মিঠামইন উপজেলায় ২৫ জন, ইটনা উপজেলায় ১৭ জন, হোসেনপুর উপজেলায় ১৪ জন, নিকলী উপজেলায় ১১ জন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় পাওয়া গেছে ৪ জন।

 

এর মধ্যে ভৈরব উপজেলায় মারা গেছেন ৫ জন, সদরে ৪ জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, হোসেনপুর উপজেলায় ১ জন, কটিয়াদী উপজেলায় ১ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ১ জন, বাজিতপুর উপজেলায় ১ জন ও মিঠামইন উপজেলায় ১ জন।

 

সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ভৈরবের অবস্থা নিয়ে আমরা খুব উদ্বেগে আছি। এখানে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। এখন কথা হলো, কারও মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। আইসোলেশনে নিতে হবে।’

 

সিভিল সার্জন জানান, বর্তমানে জেলায় মোট ৪১১ জন কোভিড-১৯ রোগী এবং ১০ জন সাসপেক্টটেড বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। এর মধ্যে ভৈরবের রোগীই বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে অন্য জেলায় শনাক্তকৃত ২ জন করোনা পজেটিভও আছেন।

 

সিভিল সার্জনের বক্তব্য ‘দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেক রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় আসছেন। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে আরো সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।’

অর্জুন কর্মকার, নিজস্ব প্রতিনিধি | বাংলাদেশদর্পণ.কম