৩ দিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে দুই দল গ্রামবাসী মারামারিতে অংশ নেয়। মারামারির পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিনিধি স্থানীয়দের কাছে জানতে চান, লকডাউন উপেক্ষা করে তারা মারামারি করলেন কেনো? এক যুবক জানান, তারা মারামারির সময় সবাই ফেসমাস্ক পরে ছিলেন এবং মারামারি শেষে তারা সাবান দিয়ে হাতও ধুয়েছেন। আরেকজন জানান, তারা লম্বা লাঠি আর টেডা ব্যবহার করেছেন, যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে!
মজা করার উদ্দেশ্যেই কারও দ্বারা উপরের রম্যরচনার সৃষ্টি হয়েছে। রচনার সাথে ছবি, স্থান, কাল, পাত্র এবং ঘটনার কোনো মিল নেই। উপরের ঘটনাটা পুরো কাল্পনিক হলেও নিচের ঘটনা কিন্তু পুরোটা বাস্তব এবং গম্ভীর।
শনিবার (৪ এপ্রিল) যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়ীয়ার হাটবার (সাপ্তাহিক বাজারের দিন) ছিল। গত তিনদিন বাজারের সব দোকারপাট (ওষুধ ছাড়া) বন্ধ থাকায় হাটে প্রচুর জনসমাগম হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো সুযোগ ছিল না। সবাই যে যার মত বেচা-কেনা করতে ব্যস্ত। এমন সময় বাজারে এলো সেরাবাহিনীর গাড়ি। হঠাৎ তাড়া-হুড়া শুরু হল। ক্রেতা-বিক্রেতা যে যার মত পালিয়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করলেন। কিছু সময় পর বাজারে আর লোক পাওয়া গেল না।
বাঘারপাড়ার ওসি মহোদয় বলেছেন, জরুরী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান খোলা রাখার নির্দেশ রয়েছে। তাহলে পুরো বাজার কেন বন্ধ আমরা বুঝতে পারিনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করে গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বেচা-কেনা চালিয়ে যাওয়ার মত ব্যবস্থা কেন করা হচ্ছে না, সেটাও আমরা বুঝতে পারিনি।
সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সহৃদয় ব্যক্তি, সংস্থা গরীব মানুষের পাশে দাড়াচ্ছেন। এই ক্রান্তিকালে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। যা অত্যন্ত সুখের সংবাদ এবং প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু সেসব স্থানেও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। ছবি তোলার উদ্দেশ্যে ত্রাণ দান নয়, মানুষের প্রকৃত উপকারের জন্য হোক মানবিক সাহায্য। এসব বিষয়েও সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিত।
ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা কাজে যোগদানের জন্য রওনা হচ্ছেন। পায়ে হেঁটে, ট্রাকে যে যার মতো করে ছুটছেন ঢাকায়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি তন্দ্রা ভট্টাচার্যের ফেসবুক প্রফাইলে শেয়ার করা ছবিতে দেখেছি, ফেরির উপর এবং ফেরিঘাটে ঢাকাগামী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তাঁরা সবাই কর্মক্ষেত্রে অর্থাৎ গার্মেন্টসের কাজে ফিরে যাচ্ছেন। কারও কারও অবশ্য অন্য প্রয়োজনও থাকতে পারে।
আগতদের সবাই বলছেন, রোববার (৫ এপ্রিল) কারখানা খুলবে, সময়ের আগেই নিজ নিজ কর্মস্থলে পৌঁছাতে হবে। এই ঢাকামুখী মানুষের কাছে করোনা ভাইরাসের চেয়ে চাকরি হারানো কিংবা বেতন না পাওয়ার ভয় অধিক।
অঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ এসব ঢাকামুখী মানুষ নিয়ে কতটা চিন্তা করছেন আমরা জানি না। কই, সেনাবাহিনী বা পুলিশবাহিনী কি সেসব চিত্র দেখতে পাচ্ছেন না? সেখানে যে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না - তা নিয়ে কি কারও কোনো কিছু করার নেই? কর্মে যোগদানের পর তাঁরা যে ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন - সে বিষয়ে কি চিন্তা করার কেউ নেই?
সরকার গার্মেন্টস খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলো কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য। তাহলে গার্মেন্টস খোলার এত তাড়া কেন আমরা বুঝতে পারিনি। মানুষের জীবনের চেয়ে টাকার মূল্য কি অনেক বেশি? গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে যদি করোনা ছড়িয়ে পড়ে - সে দায় কে নেবে? তাঁদের মাধ্যমে যদি আরও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তবে এই বোকামির দায় কার?
এখনই গার্মেন্টস বন্ধ করে দেওয়া উচিত। খোলার সিদ্ধান্ত আরও কয়েকদিন পরে নেওয়া উচিত। দেরি করলে বড্ড ভুল হয়ে যাবে। দয়া করে দেশকে মৃত্যুপুরী বানাবেন না।
লেখক: মিন্টু ভদ্র, সমাজকর্মী
[এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলাদেশ দর্পণ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।]