আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গুরুদেবের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন দু’জন হিন্দু সাধু। কিন্তু সেই যাত্রাই যে তাদের জীবনের শেষযাত্রা হবে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি ওই সন্ন্যাসীদ্বয়। পথিমধ্যে কিছু উন্মত্ত জনতার গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন তারা। তাদের নির্মমভাবে হত্যার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।

মহারাষ্ট্রের পালঘরে সংঘটিত এই মর্মান্তিক ঘটনায় মারা যাওয়া দুই সাধুর নাম সুশীল গিরি মহারাজ (৩৫) ও চিকানে মহারাজ কল্পবৃক্ষগিরি (৭০)। তাঁদের গাড়ির চালক নীলেশ তেলাঙ্গেক (৩৫)-কেও হত্যা করেছে উন্মত্ত গোষ্ঠী।

 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, চুরির গুজব রটিয়ে পুলিশের সামনেই সাধুদের উপর হামলা করে স্থানীয় কিছু লোক। পুলিশের উপস্থিতিতে জীবন বাঁচানোর আকুতি জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি তারা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রাণ বাঁচাতে বার বার পুলিশের হাত জাপটে ধরে আকুনি জানান ওই সাধু, আর পুলিশ নির্লিপ্তভাবে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় লাঠিসোটায় সজ্জিত উন্মত্ত জনতার মাঝে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।

মহারাষ্ট্রের রাজ্যমন্ত্রী অনিল দেশমুখ ওই ঘটনাকে যেন সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক করেছেন। এ ব্যাপারে যারা সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে, পুলিশ তাদের ওপরে কড়া নজর রাখছে বলে তিনি জানান। তিনি দাবি করেন, আক্রান্ত ও আক্রমণকারী উভয়ে একই সম্প্রদায়ের।

কিন্তু ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে ভিন্ন কথা। তাদের সংবাদে ফুটে উঠেছে পালঘর এলাকায় বর্তমানে কট্টরপন্থীরা সক্রিয় অবস্থান করছে। ওখানে খ্রিষ্টান যাজকেরাও বিভিন্ন প্রলোভনে মানুষকে ধর্মান্তর করে চলেছে। যার ফলে বৃদ্ধ ও গেরুয়া পোশাক পরা সন্ন্যাসী দেখা সত্বেও তারা মানবিকতা না দেখিয়ে হত্যার মত জঘণ্য কাজ করেছে।

 

সাধু হত্যার এমন ঘটনায় লকডাউনের মাঝেও ফুঁসছে গোটা ভারত। সামাজিক মাধ্যমে চলছে তুমুল নিন্দা-সমালোচনার ঝড়। বিশেষত পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা দেখে মানুষ বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পুলিশের উপস্থিতিতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় হতবিহ্বল সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বোদ্ধা মহলও।

সাধু-সন্ন্যাসীদের সর্বভারতীয় সংস্থা ‘অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ’ দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। তারা চলমান লকডাউন পরিস্থিতি শেষে মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এদিকে পুলিশ ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ১১০ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে ১০১ জনকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হেফাজতে নিয়েছে তদন্তকারীরা। এছাড়া ৯ জন নাবালককে জুভেনাইল হোমে পাঠানো হয়েছে।