করোনা মহামারিতে দেশের প্রান্তিক ও দিনমজুর জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা সবচেয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আর যারা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় তাদের জন্য এটা আরও কঠিন পরিস্থিতি। ঠিক এমনই একটি সম্প্রদায়ের সন্ধান মিলেছে ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কঘেষা ফতুল্লা ডিআইটি সংলগ্ন নলখালি খালের উত্তর পাশে বসবাস করা প্রায় দুই শতাধিক হিন্দু পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা ঋষিপাড়া।

করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনের কবলে পরে অর্ধাহারে–অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার।

বিবিধ নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের পরিবারের সদস্যরা বরাবরের মতোই দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তেও উপেক্ষিত হচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারী কোনো মহলের লোকজনও তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিবারগুলোর।

জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের পুরাতন সড়কের ফতুল্লা বাসস্ট্যান্ড ও পোস্ট অফিস বাসস্ট্যান্ডের মাঝামাঝি জায়গার পূর্বপাশে প্রায় দুই শতাধিক হিন্দু পরিবারের বসবাস যা সকলের নিকট ঋষিবাড়ী বলে পরিচিত। ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সীমান্তঘেষা ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তারা। তাদের রয়েছে নিজস্ব একটি পঞ্চায়েত। কোনো প্রকার ঝামেলা হলে তারা নিজেদের পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই মীমাংসা করে নেয়।

ঋষিবাড়ীতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের অধিকাংশই খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানায় কাজ করে কোনো মতে দিনযাপন করে আসছিলেন তারা। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনের কবলে পরা এ সকল খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। তাদের অনেকের ঘরেই নেই খাবার। লকডাউনের পর তাদের খোজঁ-খবর নিতে আসেনি নেতা কিংবা কোনো জনপ্রতিনিধি। তারা পায়নি কোনো সরকারী অনুদান বা সরকারের তরফ থেকে কোনোপ্রকার ত্রাণ।

ঋষিপাড়ার বাসিন্দা পংকজ দাস, শিশুরাজ দাস-সহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগের সুরে বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দা হবার পরও কেনো আমরা শুধুমাত্র ভোট প্রদান ছাড়া সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত! লকডাউনের পর থেকে আমরা খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টের মাঝে বেঁচে আছি। আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি কোনো নেতা, জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি দপ্তরের কেউ। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা আমরা কোনো দিক থেকে কোনো প্রকার ত্রাণ না পেয়ে ক’দিন পূর্বে ছুটে গিয়েছিলাম স্থানীয় চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন-সহ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বাড়ীতে। কিন্তু তারা আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন খালি হাতে।

ফতুল্লা রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি ও দুই শতাধিক পরিবারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পাঞ্চায়েত কমিটির সদস্য রনজিৎ মোদক বলেন, এখানে বসবাসকারী সংখ্যালঘু পরিবারের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের সাধারণ শ্রমিক। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কবলে পরে এ সকল নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্যদ্রব্যের চরম সংকট। অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের অনেককেই। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না কেউ।

কয়েকদিন পূর্বে তাদের অনেকেই ত্রাণ বা খাদ্য পাবার আশায় গিয়েছিলো চেয়ারম্যানের বাসায়। চেয়ারম্যান তাদের বলেছে যে, সরকার তরফ থেকে ত্রাণ আসলে তিনি তা পৌঁছে দিবেন। তিনি আরো বলেন, শুধু মাত্র ভোটপ্রদান করা ছাড়া সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের ঋষিবাড়ীর বাসিন্দারা। অতীতের মতো বর্তমানেও তাদের সম্প্রদায়ের লোকজনের প্রতি নজর নেই সরকার, নেতা কিংবা কোনো জনপ্রতিনিধির। বরাবরের মতো আজও তারা অবহেলিত।

তিনি সমাজের বিত্তবান, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী কর্মকর্তাদের প্রতি অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করা মানুষের পাশে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান।

এ বিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন জানান, ঋষিবাড়ীর ৯০ জনের একটি তালিকা জমা হয়েছে। সরকারী ত্রাণ আসা মাত্রই তালিকানুযায়ী তাদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।