নারায়ণগঞ্জ: স্ত্রী-কন্যাদের করুণ মিনতিতেও এগিয়ে এলো না প্রতিবেশী-স্বজন। করোনা উপসর্গ থাকায় হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে না আসায় স্ত্রী-কন্যাদের নিয়েই বের হন নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ী। কিন্তু সিঁড়িতেই পড়ে মারা যান তিনি। তার এই নির্মম মৃত্যুর পর মরদেহ ছুঁয়েও দেখেনি তার আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা। স্ত্রী কন্যাদের কান্না দেখেও মন গলেনি তাদের।

নারায়ণগঞ্জের গলাচিপায় মৃত ওই ব্যবসায়ী কালীরবাজারে একটি অভিজাত কনফেকশনারীর মালিক। তিনি স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়ে নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন।

রবিবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১২ টার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আলোচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কেউই উপস্থিত হয়নি সৎকারে। ফলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই ব্যবসায়ীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই কাউন্সিলর। এমনকি হিন্দুধর্মীয় শাস্ত্রীবিধি অনুযায়ী মৃতদেহের মুখাগ্নিও করেন কাউন্সিলর খোরশেদ।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, স্ত্রী ও দুই ছোট ছোট মেয়ে নিয়ে গলাচিপায় নিজের বাড়িতে থাকতেন ওই ব্যবসায়ী। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তার আশপাশের ফ্ল্যাটে থাকা বন্ধুদের ও আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য চেয়েছিলেন তারা যেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দুঃসময়ে তার ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। পরে স্ত্রী ও ছোট দুই নাবালিকার সাহায্য নিয়েই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ব্যবসায়ী। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারলেন না। সিঁড়িতে পড়ে গেলেন তিনি। স্ত্রী ও ছোট বাচ্চারা তাকে সামলাতে পারেননি। সিঁড়িতে পড়ে সেখানেই মারা যান ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী-কন্যাদের কান্না-আহাজারিতেও কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্য করতে। পরবর্তীতে ‘অসহায়ের সহায়’ কাউন্সিলর খোরশেদ’কে খবর দেওয়া হয়। মৃতদেহ উদ্ধার করে যথাবিধি সৎকারের ব্যবস্থা করেন তিনি।

কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, সকালের দিকে যখন তিনি করোনা পজিটিভ এক নারীর দাফন করছিলেন; তখন তার কাছে ফোন আসে। জানতে পারেন ওই ব্যবসায়ী মারা গেছেন। কিন্তু তার আত্মীয়-স্বজন বিষয়টি ফোন করে জানালেও কেউ মরদেহের কাছে আসেনি।

আলোচিত এই কাউন্সিলর আরও বলেন, শহরের গলাচিপা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী ছিলেন ওই ব্যক্তি। তিনি ও তার ৭ বন্ধু মিলে একটি সাততলা ভবন গড়ে তুলেছিলেন। সেখানেই থাকতেন তিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ওই ভবনের তিন এবং চারতলার মাঝামাঝি সিঁড়িতে তার মৃতদেহ পড়ে আছে। পরে তার সৎকারের ব্যবস্থা করি।

এডি/আরকে