বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দকে একবার এক প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘স্বামীজী আপনি বিদেশে গিয়ে আপনার ভাষণের দ্বারা পুরো বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন। আজ আপনি সকলের চোখে মহামানব কিন্তু আপনি ভারতবর্ষে কেন ভাষণ দেন না?’
স্বামীজি উত্তরে বলেছিলেন, পাশ্চাত্যের দেশের মানুষজন ভোগবিলাসের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাই সেখনে অনেকের মধ্যে সত্যকে পাওয়ার আশা রয়েছে। অন্যদিকে ভারতে এখন দরিদ্রতার মধ্যে মানুষজন দিন কাটাচ্ছে তাই এখানে আগে দরিদ্রতা দূর করে জমি তৈরি করতে হবে তাহলেই চাষ তীব্রগতিতে সম্ভব হবে।
বলা হয় স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যে বেদান্তের জ্ঞান থাকার কারণেই নিকোলা টেশলার মতো মহান বিজ্ঞানীরা উনার উপদেশ নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হতেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, বেদান্তের বাণী ভারতকে জাগিয়ে তুলবে। স্বামীজী বলতেন ভারতের কাছে এমন অনেক কিছু রয়েছে যা যুবসমাজ কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত উন্নতি করতে পারে।
নোবেল পুরস্কারজয়ী মহান বিজ্ঞানী এরভিন শ্রোডিঙার (Erwin Schrödinger) পর্যন্ত ভারতে থাকা মহৎ জ্ঞানের বিষয়ে বলেছেন। এরভিন শ্রোডিঙার Wave function-এর আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর জনক হিসেবেও পরিচিত এরভিন শ্রোডিঙার। উনার থিওরি অনুযায়ী ব্রহ্মাণ্ডে থাকা সমস্ত কিছু অর্থাৎ তারা, নক্ষত্র, জীব-জন্তু সবকিছু wave function তথা সবকিছু একটা সূত্রে বাঁধা রয়েছে। এই সবকিছুর ভাঙা গড়া একটা নিরন্তর পক্রিয়া যেটাকে বলা হয় unity and continuity of wave mechanics।
বেদ, উপনিষদের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে এরভিন শ্রোডিঙার বলেন, কোয়ান্টাম ফিজিক্স-এর সমস্ত তথ্য হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় শাস্ত্রে রয়েছে। এরভিন শ্রোডিঙার যে unity and continuity এর কথা বলেন, সেই একই কথা বেদান্তে রয়েছে। বেদান্তের মতে সমস্ত দুনিয়ার ভেতরে ও বাইরে যা সমাহিত রয়েছে তাই ব্রহ্ম, এই ব্রহ্মাণ্ড যতই বিচিত্র ও প্রসারিত মনে হোক না কেন সবের মধ্যে একই ব্রহ্ম সমাহিত রয়েছে। উপনিষদের একটা ফর্মুলা Tat Tvam Asi (तत् त्वम् असि) এর মধ্যে unity and continuity সমস্ত বিষয় রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। বলা হয়েছে ‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম’ অর্থাৎ সবকিছুর মধ্যেই পরিব্যাপ্ত ও বিস্তৃত হয়ে আছেন ব্রহ্ম। তাই সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে সূক্ষ্ম ঐকতান ও মহাকালের ধারায় অব্যাহত চলমান থাকার প্রক্রিয়া।