নতুন উদ্ভাবিত একটি কিট দিয়ে যক্ষা পরীক্ষার মেশিনে ৩০ থেকে ৫০ মিনিটে করোনা শনাক্ত করা সম্ভব। আর নতুন এ উপায় উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স নিউজার্সি মেডিকেল স্কুল এবং ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেপিডের যৌথ গবেষক দল। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশের সন্তান ড. সুকল্যানী বণিক। তিনি রাটগার্স নিউজার্সি মেডিকেল স্কুলের রিসার্স টিচিং স্পেশালিস্ট। উদ্ভাবিত সে কিট দিয়ে এরইমধ্যে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ড. সুকল্যাণী বণিক ঢাকাস্থ ওয়ারি’র সন্তান। তিনি কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে অষ্টমস্থান দখলসহ প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগ/শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের New York Medical College-এ Microbiology and Immunology বিষয় নিয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে Rutgers New Jersey Medical School-এর Department of Medicine-এ Research Teaching Specialist হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

করোনা পরীক্ষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম আরটি পিসিআর ল্যাব। বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহার চলছে। তবে এটি কিছুটা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়াতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষক দল করোনা শনাক্ত ও পরীক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই করোনা পরীক্ষায় নতুন উপায় খুঁজতে গবেষণা শুরু করা উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান দুটির যৌথ গবেষক দল। তবে রাটগার্স মেডিকেল স্কুল ও সেপিডের যৌথ গবেষক দল কাজ শুরুর মাত্র একমাসের মধ্যেই সাফল্যের দেখা পায়। এক্ষেত্রে বলা যায়, মাত্র ৩০ থেকে ৫০ মিনিটেই করোনা শনাক্ত হয়- এমন কিট উদ্ভাবন ভাইরাসের বিস্তার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডে করোনার প্রতিষেধক তৈরির টিমে বাঙালি কন্যা চন্দ্রা দত্ত

ড. সুকল্যানী বণিক জানান, যক্ষা পরীক্ষার জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়ে এ পরীক্ষা করা সম্ভব। প্রথম দিকে করোনা পরীক্ষার যেসব কিট এসেছিল, দেখা গেল তা দিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। এতটা সময় ব্যয়ের কারণে ভাইরাসটা ছড়িয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল যে, কতটা অল্প সময়ের মধ্যে করোনার তথ্যটা আমরা রোগীর কাছে পৌঁছে  দিতে পারি। আমাদের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহারের অনুমতি  দিয়েছে  যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন হাসপাতালে এ কিট ব্যবহার করে করোনা শনাক্তে পরীক্ষা হচ্ছে।

আশার কথা হলো নতুন এ উদ্ভাবন বাংলাদেশের করোনা পরীক্ষায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দেশের ৬৪টি জেলায় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল রয়েছে যেখানে রয়েছে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় জেনারেশনের জিন এক্সপার্ট মেশিন। তথ্যানুসারে, দেশে জিন এক্সপার্ট মেশিন আছে ২৫০টি। প্রতিটি মেশিনে গড়ে ৪০টি পরীক্ষা করা যাবে। এতে করে প্রতি ঘণ্টায় ১০ হাজার ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সুকল্যানী বণিক ও তার দলের উদ্ভাবিত কিট যদি তাতে ব্যবহার করা যায় তাহলে বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়বে।