পটুয়াখালী: পটুয়াখালী জেলার গলাচিপায় প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ীর মন্দির নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্দিরের সিংহ দরজা সুতাবাড়ীয়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, অনেককাল আগে কোনও এক রাতের আধারে মন্দির এলাকায় একটি প্রাচীন বেল গাছের তলার মাটি ফুড়ে বের হয় দয়াময়ী দেবীর মূর্তি। ঠিক ওই রাতেই এলাকার জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হন দেবী দয়াময়ীর মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
আবার কারো কারো মতে, স্বপ্নে আদিষ্ট হয় জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন গ্রামের পার্শ্ববর্তী নদীতে সূর্য স্নান করতে গিয়ে পাথরের তৈরি দয়াময়ীর মূর্তিটি ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। ওই মূর্তিটি উদ্ধার করে দয়াময়ী দেবীর নামে তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
জানা গেছে, বাংলা ১২০৮ সনে গলাচিপার সুতাবাড়ীয়া গ্রামে প্রায় তিন একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরটি। মন্দিরের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে আলাদা শিব মন্দির। শিব মন্দিরের উপরিভাগ উঁচু গম্বুজাকৃতির।
একসময়ে দয়াময়ী দেবী মন্দিরের প্রত্নতাত্ত্বিক সৌন্দর্য্যে আকৃষ্ট হয়ে দেশ-বিদেশ থেকে আগণিত হয়ে মানুষ ছুটে আসত মন্দির দর্শনে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের সমাগমে জমজমাট থাকত সারাগ্রাম। প্রতিবছর মাঘ মাসের ১ তারিখ থেকে এক মাস ব্যাপী মেলা বসত মন্দির এলাকায়। হাজার হাজার লোক সমবেত হতো মেলায়। কলকাতা থেকে নামীদামী যাত্রাদলসহ দেশ-বিদেশের সাধু সন্ন্যাসীরা এসে ভিড় জমাতেন মেলায়।
সনাতন ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে দয়াময়ী দেবীর মন্দির এবং দয়াময়ী মেলার বিবরণ রয়েছে। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মেলাটি এখন মাত্র একদিন অনুষ্ঠিত হয় মাঘী সপ্তমীতে।
চিকনিকান্দী গ্রামের দয়াময়ী দেবী মন্দিরে পুরোহিত রিপন গাঙ্গুলি (৪০) বলেন, প্রতি বছরই মাঘের সপ্তমীতে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ পূজারী আসেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে মন্দিরটি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
চিকনিকান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ মন্দিরটি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সুতাবাড়ীয়ার দয়াময়ীর মন্দির পটুয়াখালী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মন্দির। এখনই এটা সংস্কার না করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো বিলীন হয়ে যাবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাদেশদর্পণ.কম