কোভিড-১৯ এর ছোবলে প্রতিনিয়তই কেড়ে নিচ্ছে হাজারও জীবন। এই মৃত্যুদূতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবার প্রাণায়ামের বর্মে সজ্জিত হচ্ছেন রোগীরা। সারারাত এক এক করে প্রাণায়াম করিয়ে তাঁদের ছেঁড়ে দেওয়া হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে।

 
ঘুমের মধ্যে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গভীরতা অনেক  কমে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস কমে যাওয়ায় আমাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ও কমে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের ‘বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) কম থাকে এবং শরীর কম অক্সিজেনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়। শরীর সুস্থ থাকা অবস্থায় (বিএমআর) বজায় রাখতে সক্ষম হলেও অসুস্থ শরীর অনেক সময় বিএমআর বজায় রাখার মতো অক্সিজেনও শরীর গ্রহণ করতে পারে না। আর তখনই ঘঠে বিপত্তি।

চিকিৎসকদের মতে, ‘পার্শিয়াল প্রেশার অফ অক্সিজেন’ ঘুমন্ত অবস্থায় পঞ্চান্নর উপর থাকলে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যখনই পঞ্চান্নর নিচে নেমে আসে তখনই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে মৃত্যুদূত। এই বিষইটি মাথায় রেখেই করোনাভাইরাস রোগীদের রাত বারোটা থেকে ‘স্পাইরোমিটার’ যন্ত্রের সাহায্যে প্রাণায়ম করানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঘুমন্ত অবস্থায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ব্যাপারটা তো রয়েছেই, ঘুমের সময় অক্সিজেন মাস্ক সরে গিয়েও সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই টানা ঘুমের বদলে কোভিড রোগীদের ছোট ছোট স্পেলে ঘুমাতে দেওয়া হচ্ছে। দু’টি স্পেলের মাঝখানে করানো হচ্ছে ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা প্রাণায়াম।’ স্পাইরোমিটার যন্ত্র ব্যবহার করেই চলছে কপালভাতি, অনুলোম-বিলোম বা ভস্ত্রিকার মতো শ্বাসের ব্যায়াম। তাতেই কমছে মৃত্যুর হার। সিসিইউ বিশেষজ্ঞদের মতে, রাত তিনটে থেকে পাঁচটার মধ্যে হাসপাতালে নজরদারি সবচেয়ে ঢিলে থাকে। নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রত্যেকেই ক্লান্ত থাকেন।

ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডা. অলোকগোপাল ঘোষালও জানিয়েছেন রোগীরা হাসিখুশি আছেন। কিন্তু রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে আর এটাই “হ্যাপি হাইপক্সিয়া।” রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের উপরে থাকাটা স্বাভাবিক। করোনা রোগীর ক্ষেত্রে এমনিতেই কম কখনও তা পঞ্চান্নর নিচে নেমে যাচ্ছে। কিন্তু রোগীরা টেরই পাচ্ছেন না। আর এভাবেই অক্সিজেনের অভাবে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে কোষ। ঘুমের ঘোরেই এভাবে মারা যাচ্ছেন।

এসকল দিক বিবেচনা করে বাঙুরের সিসিইউ-তে এক নতুন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। রাতভর রোগীকে রুটিন করে জাগিয়ে রেখে রাত বারোটায় প্রথম প্রাণায়াম করানো হচ্ছে। তারপর প্রতি তিন-চার ঘণ্টা পর পর রোগীকে জাগিয়ে স্পাইরোমিটারে ফুঁ দিয়ে দিয়ে প্রাণায়াম করানো হচ্ছে। বার বার মাপা হচ্ছে রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন এবং রাতে হালকা খাবার দেওয়া হচ্ছে।