আজ ভারতের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস। আর এ উপলক্ষে সকালে লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উত্তোলন শেষে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি। তিনি তার বক্তব্যে জাতির জন্য ১০ টি বার্তা প্রদান করেন। যা ভারতকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সেই ১০ টি বার্তা হলোঃ
(১) ভারত বহু শতাব্দী ধরে বিদেশি শাসনের মধ্যে দিয়ে গেছে। আমাদের জাতি, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার জন্য সমস্তরকম চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাঁরা আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়সংকল্পকে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু আমরা এগুলো নিয়েই বেঁচে ছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত আমরা বিজয়ীও হয়েছি।
(২)যাঁরা নতুন নতুন জায়গা অধিকার করে নিজেদের পতাকা লাগানোর জন্য ব্যস্ত ছিল, নিজেদের সাম্রাজ্যকে প্রসারিত করতে চেয়েছিল, তাঁরা আসলে আমাদের অবমূল্যায়ন করেছিল। বিশ্ব দুটি বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হয়েছে এবং অনেক জাতিই এইসময় ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু আমাদের এই সময়ের মধ্যেও উত্থান হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষী গোটা বিশ্ব।
(৩)বর্তমানে ভারতে তিনটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে, যা এখন বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। একবার বিজ্ঞানীরা এবিষয়ে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিয়ে দিলেই আমরা এটি বিতরণের জন্য আমাদের রোডম্যাপ ঘোষণা করব।
(৪)আমি স্বীকার করছি যে ভারতের আত্মনির্ভর হওয়ার পথে লক্ষ লক্ষ চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আর হ্যাঁ, সেইসঙ্গে বিশ্ব জুড়ে রয়েছে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতাও। তবে আমি সবসময়ই বলি যে ভারত যদি লক্ষ লক্ষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তবে তার জন্য ১৩০ কোটি সমাধানও রয়েছে।
(৫)আগেই বলেছি যে, আমরা কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার চেষ্টা করছি। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন না, অন্য যে কোনও ব্যবসায় একজন ব্যবসায়ীর তাঁর নিজের উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবাটি দেশের বা বিশ্বের যে কোনও অংশে নিজেদের পছন্দমতো দামে বিক্রি করার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু আমাদের কৃষকদের তা ছিলো না। যাঁদের কাছে ফসল বিক্রি করার কথা নির্ধারিত থাকতো শুধু তাঁদের কাছেই তাঁরা বিক্রি করতে পারত। এখন কিন্তু আমরা সেই বিধিনিষেধগুলি সরিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে দেশের কৃষকরা তাঁদের ফসল সর্বোত্তম মূল্যে তাঁর পছন্দসই ব্যক্তিকে বিক্রয় করার স্বাধীনতা পাচ্ছে।
(৬)সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে, আমি সকল করোনা-যোদ্ধাদের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক এবং নার্সরা, এই মহামারীর মধ্যে জাতির জন্য সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এমনকী অনেকে প্রাণও হারিয়েছেন। গোটা দেশ তাঁদের শ্রদ্ধা জানায়।
(৭)আমরা দেখেছি যে আমরা কোনও কিছুতে মনপ্রাণ ঢেলে চেষ্টা করলে আমরা তা অর্জন করতে পারি। আমরা এর আগে কখনই পিপিই কিট তৈরি করিনি, এমনকী আমাদের দেশে মাস্ক এবং ভেন্টিলেটরের উৎপাদনও খুব কম হতো, কিন্তু বর্তমানে আমরা সেগুলো তৈরি করছি।
(৮)আমরা এবার দেশের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছি। তবে সেইসঙ্গে সামনের বছরের গুরুত্বপূর্ণ উদযাপনের প্রত্যাশায় রয়েছি, কারণ সেটি আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ। এই মাইলফলক ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন শক্তি এবং সংকল্প পাবো। আমরা যখন এই মাইলফলকে পৌঁছবো, তখন আমরা এটি দারুণভাবে উদযাপন করবো।
(৯)আজ, আমরা ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য, একটি নতুন ভারত গড়ার জন্য মনোনিবেশ করছি - আত্মনির্ভর (স্বনির্ভর) ভারত গড়ার লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। ভারত অবশ্যই তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। ইতিহাস প্রমাণ করে যে ভারত যখনই কিছু অর্জনের জন্য দৃঢ়সংকল্প হয়েছে তখনই তা করতে পেরেছে। স্বনির্ভর ভারত এখন ১৩০ কোটি ভারতীয়দের বীজ মন্ত্র হয়ে উঠেছে।
(১০)আমরা আর কতদিন কাঁচামাল রফতানি করবো এবং অন্য দেশে তৈরি পণ্য আমদানি করবো? এখনই সময় যখন এই চক্রটি থেকে বের হতে পারবো। ভারতকে এখন খাদ্যসামগ্রী থেকে সবই উৎপাদন করতে হবে এবং শুধু তা নয়, সেগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে তাকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে রফতানিও করতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাদেশদর্পণ.কম