সুন্দর মন্দাকিনি নদী, তুষার-পাহাড়, বন এবং মন্ত্রমুগ্ধকর দৃশ্যে আবদ্ধ, কেদারনাথ ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। প্রতি বছর, কয়েক হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রী শিবের আশীর্বাদ নিতে মন্দিরে ভিড় করেন।
কেদারনাথ মন্দিরের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী রয়েছে। কেউ কেউ বলে যে এটি আদি শঙ্করাচার্য ৮ ম শতাব্দীতে তৈরি করেছিলেন। আবার কারো দাবি এটি দ্বিতীয় শতাব্দীতে মালওয়ার রাজা ভোজ নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও একাধিক গল্প আছে কেদারনাথ মন্দির নিয়ে।
জনশ্রুতি শোনা যায় যে, নারায়ণ পার্বতির পূজা করতে গিয়ে শিবের আবির্ভাব ঘটে। নারায়ণ তাঁকে মানবতার কল্যাণে তাঁর মূল রূপে সেখানে থাকতে বলেছিলেন। ভগবান শিব তাঁর আকাঙ্ক্ষা মঞ্জুর করলেন এবং কেদারনাথ তাঁর বাড়িতে পরিণত করলেন।
ভূতাত্ত্বিকরা দাবি করেন, কেদারনাথ মন্দিরটির ওপর প্রায় ৪০০ বছর ধরে তুষারপাত হয়েছিল। এটি একটি ছোট্ট বরফযুগ হিসেবে পরিচিত। দেরাদুনের হিমালয়ান জিওলজির ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মন্দিরের দেয়ালের কয়েকটি হলুদ রেখা এই অঞ্চলে হিমশৈলীর দিকে ইঙ্গিত করে। এই প্রতিবেদন অনুসারে, মন্দিরটি কেবল ৪০০ বছর ধরে তুষারের নিচে থেকে সুরক্ষিতই ছিল না, হিমবাহের চলাচলে গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি থেকেও রক্ষা পেয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমনকি মন্দিরের অভ্যন্তরেও হিমবাহের গতিবেগের চিহ্ন দেখা যায়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যে নির্মাতারা মন্দিরটির আর্কিটেকচার নকশা করেছিলেন তারা কেবল ভূখণ্ডকেই নয়, বরফ ও হিমবাহ তৈরির বিষয়টিও মাথায় রেখেছিলেন। এটাও নিশ্চিত করেছিলেন, এই কাঠামোটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিরোধের জন্যই যথেষ্ট শক্তিশালী।
২০১৩ সালে, উত্তরাখণ্ডের উপর বিশাল বন্যা বয়ে গেছে। সেই ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে ১৯৭ জন প্রাণ হারায়। প্রায় ২৩৬ জন আহত হয়, আর ৪০২১ জন নিখোঁজ হয়েছিল। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট ২,১১৯ টি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ৩,০০১ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ১১,৭৫৯ টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে এরকম ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেই ঘটেছিল এক অলৌকিক কাণ্ড। এই ঢলে কেদারনাথ মন্দির খুব সহজেই ভেসে যেতে পারত। কিন্তু বিস্ময়করভাবে সুবিশাল একটি প্রস্তরখণ্ড হিমালয় থেকে গড়িয়ে আসে। পাথরটি ঠিক মন্দিরের সামনে এসে স্থির হয় এবং প্রচণ্ড পাহাড়ি ঢলের স্রোত থেকে মন্দিরকে রক্ষা করে। এমন অদ্ভূত ঘটনাটিকে ডিসকভারি চ্যানেলও তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। ঘটনাটিকে ভক্তরা বিবেচনা করছেন, যেন স্বয়ং ভগবান নিজেই তার মন্দিরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছেন।
কেদারনাথ মন্দিরের অনন্যসাধারণ স্থাপত্য আর পরম আধ্যাত্মিক পরিবেশ ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক কোটি কোটি মানুষকে আকর্ষণ করে চলেছে।
ফিচার ডেস্ক | বাংলাদেশদর্পণ.কম