নিঃসঙ্গ অশ্রুকথা
- মাণিক রক্ষিত
হৃদয়ের সবক’টি জানালা রুদ্ধ করে
যাপিত দিবসগুলো আমার
স্বপ্নগুলো হাতড়ে হাতড়ে গুমরে মরে
চোখে তার কৃষ্ণবিবরের অন্ধকার;
যতবার চিৎকার করে বাঁচার আশায়
ততবার তার গলা টিপে ধরি সজোরে
রুদ্ধশ্বাসে ছটফট করে চাপা কষ্টে;
তবু কেমনে যেন বংশ বাড়ায় মহাকাল জুড়ে।
উন্মাতাল আমি ছুটে বেড়াই মহাশূন্যব্যাপী
ছায়াপথের বাঁকে বাঁকে বেদনার ধূলিকণা দেখি
স্মৃতির ধূমকেতু আজও ঘুরে ফেরে
মরে যাওয়া লক্ষ বছরের নক্ষত্রের লাগি।
মহাবিশ্বের অনন্য সৌন্দর্য পৃথিবীর ’পরে
দিগন্তের সমস্ত নীল শূন্যতা লয়ে
স্বর্গ সাজিয়েছি সাহারার ধূ ধূ বালুসাগরে
নীলকণ্ঠ আমি হিমালয় কষ্ট পিয়ে।
কিন্তু কেন তুমি পুষ্পবালিকা
আমার কাছে মাল্য বিকাতে এলে?
মাল্য যে ওই সবুজ প্রাণেদের জন্য
যাদের মিলিত প্রেম রঙিন ধরণীকে করে ধন্য;
আমার পৃথিবী কেবল ধূসর রঙ লয়ে খেলে।
হঠাৎ শুধালে তুমি, ‘আপনার কেউ আইব না?’
কম্পিত আমি, ‘কী বললে, কী বললে তুমি?’
বারেক শুধালে, ‘আপনার কেউ আইব না?’
কী আশ্চর্য! সত্যিই তো!
নিজেকে জিজ্ঞেস করি, ‘আমার কেউ আইব না?’
আমার পৃথিবী কেঁপে ওঠে, মরুবুকে ওঠে ঝড়,
আমার বুক চিরে ফালি ফালি আকাশ
হিমালয় ভাঙার মূর্ছনায়
ঊর্ধ্বে রুদ্র বজ্র হেনে একটা প্রশ্নই করলো,
‘আপনার কেউ আইব না? আপনার কেউ আইব না?’
দেখি, আকাশের নক্ষত্রেরা কেঁপে কেঁপে ওঠে
মিটিমিটি তারাদের দৃষ্টি স্থির হয়ে গেছে
অষ্টাদশীর চাঁদটা কেন মেঘে লুকালো?
গোধূলির সিদুঁরে মেঘ কেন রঙ হারালো?
কেন ঢেকে দিলো টুকটুকে লাল সূর্যকে?
সূর্য কি তবে কাঁদছে? নক্ষত্রেরা কাঁদছে?
তবে কেন বৃষ্টি হচ্ছে ধূ ধূ মরুভূমির বুকে?
স্বপ্নগুলো চাপা দেওয়া তপ্ত বালুরাশি
কেন ভিজে যাচ্ছে?
না! এ আমার অশ্রু নয়! আমি বিশ্বাস করি না।
স্বার্থের বাঁধে শুকিয়ে গেছে যে নদী
সেখানে ঝর্ণাধারা আসতে পারে না।
চারিদিকে মহাশূন্যের বিশাল নিস্তব্ধতা নিরবধি
কেন চিৎকার করছে একটি কথা উচ্চারি?
দু’টি কান সজোরে চেপে ধরেও কেন শুনতে পাচ্ছি-
মস্তিষ্কের অনুরণনে শুধু একটি কথা-
‘আপনার কেউ আইব না?
আপনার কেউ আইব না?
আপনার কেউ আইব না...?’
'পুষ্পবালিকা, আমার কেউ আইব না রে!
আমার কেউ আইব না।'
কবিতা: নিঃসঙ্গ অশ্রুকথা
রচনাকাল: নভেম্বর, ২০১১
স্থান: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা