দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এখন (৫ নভেম্বর) পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪ লাখ ১৬ হাজার ৬ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৬ হাজার ২১ জন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার মাত্র ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সেখানেও মৃত্যুহার ২ শতাংশের নিচে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যুহার অনেকটাই কম উপমহাদেশে। উপমহাদেশের এই পরিসংখ্যান দেখে চমকে উঠেছেন বহু চিকিৎসক-গবেষক।
বাংলাদেশের মতো অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কীভাবে সম্ভব হল এটা? কোন ম্যাজিক বলে মৃত্যুহার এতটা কম? রহস্যের উত্তর খুঁজতে বহুদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন দেশ-বিদেশের গবেষকরা। এবার সেই গবেষণায় উঠে এল এক চমকপ্রদ তথ্য। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপরিশোধিত জল ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভ্যাসই এই যাত্রায় মহামারী থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে দেশবাসীকে।
ভারতের কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ, পুণের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স এবং চেন্নাই ম্যাথেমেটিক্যাল ইন্সটিটিউটের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় জানা গিয়েছে, যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন, সহজাতভাবে তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। যার ফলে তাদের শরীরে সহজে থাবা বসাতে পারে না করোনাভাইরাস।
ঠিক এই কারণেই তথাকথিত গরীব ও মধ্যবিত্ত দেশগুলিতে করোনার দাপট তুলনামূলক কম বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। তাঁদের কথায়, এ সমস্ত দেশের মানুষ জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হন। স্বাভাবিকভাবেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাঁদের দেহে অনাক্রম্যতা তথা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়ে আছে।
এই গবেষণায় ২৪টি বিষয়কে মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, স্বচ্ছ শৌচব্যবস্থা প্রভৃতি। এই মাপকাঠির নিরিখে বিচার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন ভারতীয় গবেষকরা।
পুণের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্সের প্রাক্তন ডিরেক্টর তথা এই গবেষণাপত্রের সহ-লেখক শেখর মান্ডে জানান, ‘যে সমস্ত দেশের জিডিপি বেশি সেই সমস্ত দেশে করোনায় মৃত্যুর হারও বেশি। যদিও এই তথ্য প্রচলিত ধারণার একেবারে বিরোধী।’
গবেষণার রিপোর্ট গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হলেও, এই তথ্যগুলি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত গবেষকদের।
স্বাস্থ্য ডেস্ক, বাংলাদেশদর্পণ.কম