উত্তরবঙ্গে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে চৈত্র সংক্রান্তির ঐতিহ্যবাহী নানা আয়োজন।।
উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।।
চৈত্র মাসের শেষের দিকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রত্যন্ত গ্রামবাংলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ির উঠোন কিংবা হাটবাজারে দেখা যেত নীলশান নাচ,চামুন্ডার নাচ,দেবোংশীর নাচ মুখা নাচন কুশান নাচ ও
কাগজের তৈরি ঘোড়ার দৌড় সহ ঐতিহ্যবাহী নানা আয়োজন পরিবেশন করা হতো,ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারাও ঢং সেজে বাড়িতে বাড়িতে নাচ দিয়ে বেড়াতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় প্রায় হারিয়ে গেছে এইসমস্ত নানা আয়োজন।।
হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক ধর্মমতে দেবতা শিব সমুদ্র মন্থনে বিষপান করে নীল কণ্ঠ ধারণ করেছিলেন। আবার বৈদিক হিন্দু ধর্মমতে,সূর্য অস্ত গেলে চারিধার গাঢ় অন্ধকার হয়ে আসে। গাঢ় অন্ধকার নীল বর্ণের হয়। এখানে বছরের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার প্রতীকী হলো এই নীল। চৈত্রসংক্রান্তির দিনে নীল পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সনাতনীদের শাস্ত্রীয় মতে, পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরে সংকট কেটে সুখ ও সমৃদ্ধির আশায় শিবের আরাধনা বা শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র শেষে শিবের গাজন উৎসবই হলো নীলশানের গান।
প্রতিটি নাচের দলে ১০/১২ জনের রাধা, কৃষ্ণ, শিব, পার্বতী, নারদসহ সাধু পাগল (ভাংরা) সেজে সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি নাচ গান পরিবেশন করেন। গ্রাম বাংলার সকল মানুষের কাছে দারুণ উপভোগ্য ছিল এই আয়োজন গুলি। দেখার জন্য এলাকার সব ধর্ম-পেশার মানুষ জড়ো হতো। বিনোদনের এবং ধর্মীয় হিসেবে মনের যথাযথ চাহিদা মিটতো। চৈত্রসংক্রান্তি মেলার শেষ দিনে পূজা শেষে শেষ হতো ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানগুলো। পূজার জন্য নীলশান কুশান গম্ভীরা দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল আর নগদ অর্থ সংগ্রহ করে।পূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দু) ধর্মীয় উৎসব হলেও চৈত্রসংক্রান্তির উৎসব একসময় তা সর্বজনীন এক উৎসবে পরিণত হয়।কিন্তুু কালের পরিক্রমায় বাঙালির এ ঐতিহ্যের সংস্কৃতি আজ প্রায় বিলুপ্তির দিকে।
উত্তম কুমার রায়, নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলাদেশদর্পণ.কম