চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে সামাজিকমাধ্যম ও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন অভিনেত্রী নিজেই। গণমাধ্যমের সামনে নাটকীয়ভাবে ৯ জুন রাতে ঘটে যাওয়া তার জীবনের দুর্বিষহ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন পরীমণি। বাস্তবে সেদিন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের সঙ্গে কী ঘটেছিল? এবার এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন নাছির নিজেই।
পরীমণির অভিযোগের ভিত্তিতে বোট ক্লাবের পরিচালক ব্যবসায়ী নাছির ইউ মাহমুদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এ ব্যবসায়ী। এবার সেদিন রাতে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে মুখ খুললেন নাছির ইউ মাহমুদ।
পরীমণির সংবাদ সম্মেলন ও মামলা সবকিছুকেই ‘সাজানো নাটক’ বলে দাবি করেছেন নাছির। তার দাবি, অভিনেত্রীর এই সাজানো নাটকে তার মতো একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি সারা জীবন ধরে যে সম্মান অর্জন করেছেন তা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। আর কারও জীবনে যেন এমন ঘটনা না ঘটে বলে কামনা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: পরীমণির মামলা, প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ৫
সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাছির ইউ মাহমুদ ৯ জুনের ঘটনা বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঢাকা বোট ক্লাবের ডিসিপ্লিন, মেনটেন্যান্স, কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ও এন্টারটেইনমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তিনি। সেদিন (৯ জুন) রাতে আনুমানিক রাত ১২টায় ক্লাবের বারে তিনজন অতিথি প্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে পরীমণিসহ ক্লাবের একজন সদস্যও ছিলেন। তখন একটি টেবিলে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসে ছিলেন নাছির ইউ মাহমুদ। তিনি খেয়াল করেছিলেন, মদ্যপ অবস্থাতেই ওই তিনজন ক্লাবে প্রবেশ করেছিলেন।
নাছির বলেন, আমাদের পাশের টেবিলেই এসে তারা বসেন। এরপর ওয়েটারদের কাছে ড্রিঙ্কসের বোতল চান। এক বোতল ড্রিঙ্কস তারা দ্রুতই শেষ করে আরও এক বোতল চান। মুহূর্তেই দ্বিতীয় বোতলেরও অর্ধেক তারা শেষ করে ফেলেন।
নাছির জানান, সেদিন বোট ক্লাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে অসদাচরণ করেন পরীমণি। তিনি নিজেই উঠে গিয়ে বারের শেল্ফ থেকে তিন লিটারের একটি মূল্যবান ‘ব্লুলেবেল’-এর বোতল হাতে নেন এবং নিজের সঙ্গে সেটা নিয়ে যেতে চান। কিন্তু এটা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। ফলে ওয়েটাররা সেই দামি বোতল নিতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পরীমণি। ওয়েটারদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়, তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন চিত্রনায়িকা। উত্তেজিত হয়ে বারের টেবিলে থাকা গ্লাস-প্লেট একের পর এক ভাঙতে থাকেন অভিনেত্রী।
নাছির ইউ মাহমুদ বলেন, আমি ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি ইনচার্জ হওয়ায় ওয়েটাররা আমার সহযোগিতা চান। তখন আমি তাদের টেবিলের সামনে গিয়ে বলি, এই ড্রিঙ্কসের বোতল বিক্রির জন্য নয়। তখন পরীমণি আমাকে তুই-তুকারি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। আবারও টেবিলের গ্লাস-প্লেট ছুড়ে মারতে শুরু করেন। আমাকে লক্ষ্য করেও গ্লাস ছুড়ে মারেন তিনি। একটি গ্লাস আমার ঘাড়ে এসে লাগে।
নাছির জানান, এসময় পরীমণির সঙ্গে আসা জিমিও তার ওপর চড়াও হন। তখন ক্লাবের সিকিউরিটি স্টাফদের ডাক দেন তিনি। উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টিকারীদের ক্লাব থেকে বের করে দিতে নির্দেশ দিয়ে সেখান থেকে চলে যান নাছির ইউ মাহমুদ।
এই ঘটনার চারদিন পর হঠাৎ করেই পরীমণি তার ফেসবুকে পোস্ট দেন। এর কিছুক্ষণ পরে পরীমণি সংবাদ সম্মেলন করে নাছির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে নাটকীয়ভাবে ‘মিথ্যাচার’ করেন বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী। এতে তিনি বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রকাশিত হয়েছে সেদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ। আপনারা অনুধাবন করেছেন সেদিনের সত্যিকারের ঘটনা কী ছিল। আমি দেশের আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখি। আমি ন্যায়বিচার পাব বলে আমার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান পরীমণি
বিনোদন ডেস্ক, বাংলাদেশ দর্পণ